
সাম্প্রতিককালে H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর, বিশেষ করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস আছে – তাদের কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি কর্ণাটকের একজন ব্যক্তি, যাঁর ডায়াবেটিস ছিল এবং ডায়াবেটিসের জটিলতার কারণে মারা যান, যা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি ভ্যারিয়েন্ট। সংক্রমণের বিস্তার রোধ করার জন্য বিশেষজ্ঞরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জনাকীর্ণ স্থানগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ভারত সরকারের এক প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, ভারতে জানুয়ারি মাসে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেসের কারণে ৭,০৪১ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৬,৯১৯ জন এবং ৯ মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত ১,৮৬৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। এতে ল্যাবরেটরি টেস্ট দ্বারা নিশ্চিত করা H3N2 ভ্যারিয়েন্ট সহ ইনফ্লুয়েঞ্জা সাবটাইপের ৩,০৩8 টি ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত।
তবে, বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন যে, এ পর্যন্ত H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস H1N1 ইনফ্লুয়েঞ্জার অনুরূপ উপসর্গ সৃষ্টি করছে এবং তাতে দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। সংক্রামিত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এক সপ্তাহের মধ্যে সময়মত চিকিৎসা গ্রহণ করার ফলে সেরে ওঠেন বলে তাঁরা জানান।
ফ্লু-এর জটিলতা: কারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন?
ইউ এস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলারা, এবং নির্দিষ্ট কিছু দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা (যেমন হাঁপানি এবং অন্যান্য ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, এবং স্নায়বিক বা স্নায়বিক বিকাশজনিত অবস্থা) ফ্লু-এর গুরুতর ঝুঁকির আওতায় রয়েছে।
তবে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের ইমিউনিটি সংকটাপন্ন হওয়ার কারণে তাদের সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
বেঙ্গালুরুর সাকরা ওয়ার্ল্ড হাসপাতালের ইন্টার্নাল মেডিসিন এবং ডায়াবেটোলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডঃ সুব্রতা দাস বলেন, “ডায়াবেটিস রোগীদের H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ যে কোনও ধরনের সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।” “কয়েকটি ঘটনা ছাড়া, এই ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে সাধারণত এন্টিভাইরালের প্রয়োজন হয় না।”
মণিপাল হাসপাতাল বেঙ্গালুরুর ডায়াবেটিস এবং এন্ডোক্রিনোলজির পরামর্শদাতা, ডাঃ আদর্শ কে এস, আরও বলেন যে ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের যদি হৃদয়জনিত এবং ফুসফুসজনিত সমস্যার মতো অন্যান্য জটিলতা থাকে তবে তারা উচ্চতর ঝুঁকিতে থাকে। “ইনফ্লুয়েঞ্জার আরো গুরুতর ধরনের সংক্রমণ হওয়ার এবং গৌণ ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হওয়ার ক্ষেত্রে তারা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে,” তিনি বলেন।
H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা উপসর্গগুলি
H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গগুলি হল:
- জ্বর যা তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত থাকে (যেখানে জ্বর সাধারণত প্রথম দুই দিন খুব বেশি হয়)।
- কাশি যা দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে
- নাক থেকে জল পড়া বা নাক বন্ধ হওয়া
- শরীরে ব্যথা হওয়া।
- ক্লান্তি বা শ্রান্তি যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেন যে ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
“ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে তারা যেন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, ভাল স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখে, জনাকীর্ণ জায়গায় মাস্ক পরে এবং তাদের এন্ডোক্রিনোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে বার্ষিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নেয়,” ডঃ আদর্শ বলেন। ডাঃ দাস আরও বলেন, যখন তাদের কোনও উপসর্গ থাকে না, তখন তাদের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।
ডাঃ দাস বলেন, যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিরা H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়, তবে তাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, ভাইরাল মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের ঝিল্লির প্রদাহ), ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গের সংক্রমণের মত জটিলতা দেখা দিতে পারে। অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় নিচে নেমে গেলে তাদের আরও বেশিদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।
সারসংক্ষেপ
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জার দ্বারা আরও বেশি সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা থাকে।
- লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, শরীরের ব্যথা, কাশি এবং ক্লান্তি যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
- বিশেষজ্ঞরা বলেন যে H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ বাড়তে থাকার ক্ষেত্রে এখনো কোনও দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই, তবে তাঁরা বিশেষত ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করে বার্ষিক ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়ার সুপারিশ করেন।
- ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের জনাকীর্ণ জায়গাগুলি এড়িয়ে চলা উচিত এবং মাস্ক পরা উচিত। যদি তারা সংক্রমিত হয় তবে তারা নিউমোনিয়া, ভাইরাল মেনিনজাইটিস এবং ফুসফুস, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গের সংক্রমণের মত জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।