
অনেকেই দৌড়াতে পছন্দ করেন কারণ দৌড়ানোর মাধ্যমে জিমে শরীরচর্চা করার বিভিন্ন জটিলতা এবং খরচের বদলে অনেক বেশি মানসিক প্রশান্তিতে এবং যথেষ্ট সুবিধাসহ শরীর ফিট রাখা যায়। এর জন্য শুধুমাত্র একটা আরামদায়ক জুতো যা পরে দৌড়ানো যায় আর একটা প্রশিক্ষণ সূচী প্রয়োজন। এইগুলি পেলেই এমন এক অভিজ্ঞতা হবে যা বিভিন্ন দূরত্ব পর্যন্ত (৫ হাজার, ১০ হাজার বা ম্যারাথন) শান্তিতে দৌড়ানোর ক্ষমতায় সক্ষম করে তোলার মাধ্যমে একজন রানারকে মানসিক প্রশান্তি দেয় – যা তাঁর কাছে আনন্দ তুঙ্গে ওঠার সমান। কিন্তু এটা ততক্ষণ পর্যন্তই শুনতে ভালো লাগে যতক্ষণ না কয়েক কিলোমিটার দৌড়ানোর পর হঠাৎ করে মাসল ক্র্যাম্প হতে শুরু করে।
একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এমন কেউ বা পেশাদার ম্যারাথনার, মাসল ক্র্যাম্প যে কারও দৌড়ানোর সময়েই দেখা দিতে পারে। প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি নির্দিষ্ট সূচী (যা পেশীকে যথাযথ অবস্থায় থাকতে সাহায্য করে) এবং কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে এই বিরক্তিকর মাসল ক্র্যাম্প হয় না।
দৌড়ানোর সময় কেন মাসল ক্র্যাম্প হয়?
মাসল ক্র্যাম্প, যার অর্থ হল দেহের পেশীগুলির আকস্মিক অনিচ্ছাকৃত সংকোচন, তা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। দৌড়ের আগে বা দৌড়ানোর সময় যে পরিমাণ জল খাওয়া হয় তা থেকে শুরু করে প্রাক-দৌড় এবং দৌড়-পরবর্তী রুটিন এবং পুষ্টি, সবকিছুই পেশীর সর্বোচ্চ কার্যকারিতা দিতে সক্ষম হওয়ার ক্ষেত্রে একটি ভূমিকা পালন করে।
দৌড়ের সূচনাকালে দৌড়ের গতিও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে বেশি দূরত্বে যে রানাররা দৌড়ান তাঁদের মধ্যে ‘ব্যায়াম সম্পর্কিত মাসল ক্র্যাম্পিং’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও, দৌড়ের প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত দৌড়ানোর পাশাপাশি দৌড়ের আগে পেশীতে আঘাতও (ছোট আঘাত) মাসল ক্র্যাম্পের কারণ হতে পারে।
পুনের একজন ম্যারাথন এবং ফিটনেস কোচ হিতেন্দ্র চৌধুরী বলছেন যে “রানারদের মাসল ক্র্যাম্পের প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি হল ডিহাইড্রেশন৷ ডিহাইড্রেশন বলতে, আমি শুধুমাত্র দৌড়ানোর সময়ের কথাই বলছি না, নিয়মিতভাবেও অপর্যাপ্ত জল পান করার কথাই বলছি। অপর্যাপ্ত হাইড্রেশনের ফলে দেহের কোষগুলিতে জলের ঘাটতি দেখা দেয়। আরেকটি কারণ হল ইলেক্ট্রোলাইটের ক্ষতি। যখন একজন ব্যক্তির ঘাম হয়, তখন শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে যায় এবং তা পুনরুৎপাদিত না হলে ক্র্যাম্প হতে পারে।”
তিনি খাদ্যাভ্যাস এবং মাসল ক্র্যাম্পের মধ্যে সংযোগের বিষয়টিও বিশদে ব্যাখ্যা করেন। নিরামিষাশী বা ভেগানরা তাদের খাদ্য থেকে অপর্যাপ্ত ভিটামিন বি 12 পায়। এর ফলে এই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং এর থেকে মাসল ক্র্যাম্প হতে পারে।
চৌধুরী বলেন, “যদি কারো শরীরে ভিটামিন বি 12 এর অভাব থাকে এবং তারা তা তাদের খাদ্য থেকে না পায়, তবে দৌড়ানোর সময় শরীর থেকে যে ভিটামিন নিষ্কাশন হয়ে যায় তা পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিপূরক [ডাক্তারের দ্বারা নির্দেশিত] গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়”।
যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ
চৌধুরী বলেন, “রানাররা প্রায়ই দীর্ঘ দৌড়ের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেন না। আজকাল, আমরা এমন কিছু চ্যালেঞ্জ দেখি যেখানে একজন রানার ১০০ দিন ধরে দীর্ঘ একটা দূরত্ব দৌড়ান। এটি ক্ষতিকারক, কারণ পেশীর অত্যধিক ব্যবহারও মাসল ক্র্যাম্পের কারণ হতে পারে। বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে তিন দিন (সর্বোচ্চ চার) দৌড়ানোর জন্য রেখে শক্তি প্রশিক্ষণ এবং বিশ্রামের জন্য অবশিষ্ট দিনগুলি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তিই এও বলেন যে, “উপরন্তু, দৌড়বিদরা প্রায়ই যতটা সম্ভব বেশি দৌড়ে অংশ নিতে চান, যা একেবারেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাদের অবশ্যই সঠিক বিশ্রাম এবং দুটি রেসের মধ্যে দেহের শক্তি পুনরুদ্ধার করার মতো যথেষ্ট সময়ে হাতে রেখে রেস বেছে নিতে হবে”।
সঠিক ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন স্ট্রেচ মাসল ক্র্যাম্প এবং অন্যান্য দৌড়-সম্পর্কিত আঘাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। চৌধুরী পরামর্শ দেন, “যদি দৌড়ের সময় ক্র্যাম্প হয়, তাহলে একটু বিরতি নিন। ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মাসল স্ট্রেচ করুন এবং ক্র্যাম্প বন্ধ হলে তবেই আবার দৌড় শুরু করুন।
লবণের ভারসাম্যহীনতা পুনরুদ্ধার এবং প্রশিক্ষণ কমানো
দিল্লির একজন ম্যারাথন দৌড়বিদ প্রবীণ শর্মা, ২০১৩ সাল থেকে দীর্ঘ দূরত্বে দৌড়াচ্ছেন৷ তিনি বহু বছর ধরে কখনও ক্র্যাম্পের শিকার হননি অথচ ২০২৩ সালের শুরুর দিকে, যখন দিল্লি ম্যারাথন চলছিল তখন ফিনিশিং লাইনের মাত্র ৩০০ মিটার আগে তাঁর পায়ে ক্র্যাম্প শুরু হয়৷ তিনি বলেন, “আমার অনেকদিন ধরে মাসল ক্র্যাম্প একেবারেই হয় না কিন্তু এই বছরই হল”, তিনি একইসাথে এ কথাও অনুমান করেন যে লবণের ভারসাম্যহীনতার ফলেই হয়তো তাঁকে ক্র্যাম্পে ভুগতে হয়েছে। “সাধারণত কাফ মাসলে এবং কিছু ক্ষেত্রে কোয়াড্রিসেপ মাসলেও ক্র্যাম্প দেখা দেয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে দৌড়ানোর সময়, শরীরে জল এবং লবণ যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে যায় তা দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন যে, “প্রথম দিকে, আমি আমার সাথে লবণ বা ইলেক্ট্রোলাইটের ছোট প্যাকেট নিয়ে যেতাম। আজকাল বাজারে লবণের ক্যাপসুলও পাওয়া যায়। এই জাতীয় ক্যাপসুল খাওয়ার পরে জল পান করা গুরুত্বপূর্ণ। রানাররা দীর্ঘ দৌড় বা বড় দৌড়ের আগের দিনও ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ করতে পারেন।”
পেশীগুলিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়ার জন্য রানারদের একটি বড় দৌড় বা ম্যারাথনের এক সপ্তাহ বা তার আগে তাদের প্রশিক্ষণের সময় কমিয়ে আনা উচিত। সম্পূর্ণ বিশ্রাম না করে তাদের শারীরিক কার্যকলাপ, দৌড়ানোর সময় এবং প্রশিক্ষণের মাত্রা কমানো উচিত।
সারসংক্ষেপ
- দৌড়ানোর সময় মাসল ক্র্যাম্প ডিহাইড্রেশন, দৌড়ের গতি (প্রাথমিক পর্যায়ে) এবং পুষ্টির অভাব সহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
- দৌড়ানোর আগে এবং দৌড়ের সময় পর্যাপ্ত হাইড্রেশন এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ব্যবহার মাসল ক্র্যাম্প প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, ক্র্যাম্প এবং অন্যান্য দৌড়জাত আঘাত এড়াতে যথাযথ ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন রুটিনের সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রামও গুরুত্বপূর্ণ।
- রানারদের পেশীগুলিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়ার জন্য কোনো বড় দৌড় বা ম্যারাথনের এক সপ্তাহ আগে তাদের প্রশিক্ষণের মাত্রা এবং তীব্রতা হ্রাস করা উচিত।