
ব্যাঙ্গালোর – এর ট্যালেন্ট অ্যাকুইজিশন স্পেশালিস্ট, বিদ্যা নায়ার তার প্রতিদিনের পানীয় হিসেবে চা–য়ের থেকে কফি বেশী পচ্ছন্দ করতেন। রোজ অন্তত সাতকাপ কফি খেতেন। ঘটনাক্রমে, তিনি দেখেছিলেন যে অত্যাধিক ক্যাফাইনের কারণে রাত্রে তার ঘুমের অসুবিধা হচ্ছিল।
তিনি সন্ধ্যা বেলার পানীয়র পরিবর্তে একটি বিশেষ দুধ চা পান করা শুরু করেন। একটি পারিবারিক আড্ডাতে একজন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ তাকে এই চা পান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি প্রতি সন্ধ্যায় তার নিজের মত করে এটি বানান। রেসিপি হল অ্যাডাপ্টোজেন আর হার্বসের একটি মিশ্রণ, যেটি চাপ কমানোর আর ভালো ঘুমের সহায়ক। “সন্ধ্যাবেলায় পান করার ক্ষেত্রে আবার কখনও কখনও ঘুমাতে যাবার আগে পান করার জন্য এটি একটি আরামদায়ক চা। এটা আমি অনুভব করেছি যে, আমার ঘুমের গুণমানের উন্নতি হয়েছে,” ৪০ বছর বয়সী বিদ্যা বলেন। তিনি এই আয়ুর্বেদিক অশ্বগন্ধা মশালা চা-কে মানসিক চাপ কমানোর ও ভালো ঘুমের নতুন উপায় হিসেবে দেখেন।
অশ্বগন্ধা, প্রাকৃতিক অ্যাডাপ্টোজেন
অ্যাডাপ্টোজেন (adaptogen) হল ভেষজের সমগোষ্ঠী যা শারীরিক ও মানসিক চাপকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। একটি নির্দিষ্ট থেরাপেটিক অ্যাডাপ্টোজেন ভেষজ হল অশ্বগন্ধা যেটিকে সারা বিশ্বে “ভারতীয় জিনসেং”(একটি ভেষজ যেটি শারীরিক ও মানসিক সহনশক্তির উন্নতি ঘটায়) বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
মুম্বাইয়ের নিউট্রিশন কনসালটেন্ট এবং হোলিস্টিক হেলথ স্পেশালিষ্ট ফাইজা বলেন, “অশ্বগন্ধা শরীরের কর্টিসোল (cortisol বা মানসিক চাপ হরমোন) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ফলত মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়াকে কম করে”। এটাও দেখা গেছে যে, অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ব্যধির উপসর্গ ও প্রভাবকে প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে।
দিল্লির ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট এবং স্পেশালিস্ট স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট, রিধিমা বাত্রা বলেন, “অশ্বগন্ধার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (antioxidant) গুণ থাকার কারণে এটি স্বাভাবিক মেজাজ বৃদ্ধিকারক হিসেবে কাজ করে”।
গভীর ঘুমের টিপস– গরম দুধের সাথে অশ্বগন্ধা মিশিয়ে ঘুমাতে যাবার আগে পান করুন।
অশ্বগন্ধা চা রেসিপি
উপকরণ
- এক কাপ দুধ আপনার পছন্দ মত। আমরা এখানে আলমন্ড দুধ নিয়েছি।
- আধ চা চামচ অশ্বগন্ধা গুড়ো
- দুটো সবুজ এলাচ
- আধ চা চামচ দারুচিনি গুড়ো
- দুই ইঞ্চি আদা
- এক চিমটে জায়ফল গুড়ো
- এক চা চামচ হাল্কা ব্রাউন সুগার
পদ্ধতি
কম আঁচে পাঁচ থেকে দশ মিনিট দুধ ফোটান। দুধ গরম হলে অশ্বগন্ধা, দারুচিনি, এলাচ, আদা, এবং জায়ফল মিশিয়ে ফোটান। মিশ্রণটাকে স্টোভ থেকে নামানোর আগে হাল্কা আঁচে পাঁচমিনিট ফোটান। পরিশেষে চায়ে এক চা চামচ ব্রাউন সুগার মেশান। গরম গরম পরিবেশন করুন।
বিশেষজ্ঞের মতামত
ঐতিহ্যগতভাবে, সাধারণ স্বাস্থ্যের জন্য অশ্বগন্ধার শুকনো শিকড় ও ঘি অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়ে থাকে। কেরলের আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ ডঃ অহনা নাম্বিয়ার বলেন যে মানসিক চাপের সামঞ্জস্য আনতে এবং রোগপ্রতিরোধ ও নিউরোএনডোক্রিন(neuroendocrine) পদ্ধতির মধ্যে ভারসাম্যহীনতাকে ঠিক করতে অশ্বগন্ধা চা শরীরকে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত ব্যবহার খারাপ
ডঃ নাম্বিয়ার সাবধান করেছেন যে, প্রতিদিন অশ্বগন্ধা সঠিক ডোজে ২৫০-৫০০ মিলিগ্রাম গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, “গর্ভবতী এবং স্তনপান করানো মায়েদের ও সেই সাথে অটোইমিউন (autoimmune) ব্যধিগ্রস্থদের অশ্বগন্ধা পান করা উচিত নয়”।