বর্ষার মধ্যে তাপমাত্রা হ্রাসের সাথে সাথে, সমস্ত ভারতের সব মহানগরেই কনজাংকটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের সংক্রমণের বিস্তার লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধরনের কেসগুলির মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিস জড়িত, যা আর্দ্র অবস্থায় আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরনের কেসগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গলা ব্যথা, সর্দি কাশির মতো আপার রেসপিরেটরি সিম্পটমগুলি সাধারণত চোখে দেখা দেওয়া লক্ষণগুলির সূত্রপাত হওয়ার আগে থেকে দেখা দেয়।
বেঙ্গালুরুর একটি পরিবার সম্প্রতি এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। সুরেশ এম (35) যখন গলাব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া এবং চোখ দিয়ে জল পড়া নিয়ে অসুস্থ হন, তখন তিনি প্রথমে সেটিকে সাধারণ ফ্লু বলে উড়িয়ে দেন এবং প্যারাসিটামল খান। খুব শীঘ্রই, তার চোখ ফুলে উঠতে শুরু করে এবং লাল হয়ে যায়। সুরেশের ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস ধরা পড়ে। যা সে নিজের অজান্তেই তার গর্ভবতী স্ত্রী সহ পরিবারের সবার কাছে ছড়িয়ে দিয়েছে।
ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিস কি?
SARS-CoV2 এবং অ্যাডেনোভাইরাস এর মতো ভাইরাল সংক্রমণের ফলে কনজাংকটিভাইটিস হতে পারে, চেন্নাইয়ের প্রশান্ত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ অনন্তকৃষ্ণান সি বলেন। “যেকোনও ভাইরাল সংক্রমণে গলা ব্যথা, সর্দি কাশির মতো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণগুলি থাকবে। সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে বা পরবর্তী পর্যায়ে যখন সংক্রমণ গুরুতর হয় তখন কনজাংকটিভাইটিস দেখা দিতে পারে,” তিনি বলেন।
কনজাংকটিভাইটিস ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল হতে পারে, বলেন ডাঃ শালিনী শেঠি, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, অপথ্যালমোলজি, অ্যাপোলো হাসপাতাল, বেঙ্গালুরু। “সংক্রমণটি কেবলমাত্র তাকানোর মাধ্যমে নয়, সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদি চোখ চুলকানো এবং চোখ জ্বালা করার মতো লক্ষণগুলি দেখা দেওয়ার পরে চোখের ভিতরে লালভাব দেখা দেয়, তবে লোকেদের অবশ্যই দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে হবে কারণ কনজাংকটিভাইটিস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে,” ডাঃ শেঠি বলেন।
চোখ থেকে বের হওয়া তরলের ধরনটি ছাড়া, ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল উভয় ক্ষেত্রেই কনজাংকটিভাইটিসের লক্ষণ একই রকম, ডাঃ শেট্টি বলেন। “ভাইরাল সংক্রমণে এক ধরণের জলীয় পদার্থ দেখা যায় এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে পুঁজ তৈরি হয়,” তিনি বলেন।
ডাঃ অনন্তকৃষ্ণান বলেন, “ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিস বা ফ্লু যাই হোক না কেন, সেটি সবার কাছে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার জন্য লোকেদের অবশ্যই নিজেদেরকে বাকিদের থেকে আলাদা রাখতে হবে।” তিনি আরও বলেন, সংক্রমণ শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের জলের মাধ্যমে নয়, হাঁচি বা কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমেও ছড়ায়।
গর্ভাবস্থায় চোখ ওঠা কি ক্ষতিকর?
সুরেশের স্ত্রী মেঘনা এস, যিনি তাঁর গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস সময়কালের মধ্যে রয়েছেন, তাঁর সুস্থ হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগেছিল তবে তাঁর মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়নি।
যদিও কনজাংকটিভাইটিস অত্যন্ত সংক্রামক, তবুও বিশেষজ্ঞরা রোগীদের আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। হায়দ্রাবাদের ফার্নান্ডেজ হাসপাতালের অবস্টেট্রিক্স বা প্রসূতিবিদ্যার সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ আনিশা গালা বলেন, গর্ভাবস্থায় হওয়া কনজাংকটিভাইটিস মা বা তার অনাগত সন্তানের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা সৃষ্টি করে না। তিনি আরও বলেন যে কনজাংকটিভাইটিস সাধারণত সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই ঠিক হয়ে যায়। “যদি কারো চোখে পুঁজ বা অন্য কোনও জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয়,” তিনি বলেন৷
“ভাইরাল সংক্রমণের জন্য, লুব্রিকেন্ট [চোখের জন্য] প্রেসক্রাইব করা হয় এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দেওয়া হয়। গর্ভাবস্থার দরুন নিরাপদ অ্যান্টিবায়োটিক আই-ড্রপগুলি প্রেসক্রাইব করা হয় যাতে সেগুলি মা বা শিশুর ক্ষতি না করে, “ডাঃ শেট্টি বলেন।
ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিসের বিস্তার রোধ করার পদ্ধতি
কনজাংকটিভাইটিসে চোখ জ্বালা করে আর সেই কারণে এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই তাদের চোখ হাত দেয়। এইভাবে, তারা তাদের হাতের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, ডাঃ শেঠি বলেন। “যদি পরিবারে কারো কনজাংকটিভাইটিস হয়ে থাকে, তবে তাকে অবশ্যই আলাদা ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে,” নিয়মিত হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে, তিনি বলেন।
শুধুমাত্র পৃষ্ঠতলের মাধ্যমেই কনজাংকটিভাইটিস ছড়ায় না। “ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ থাকতে পারে। বাড়িতে এবং পাবলিক প্লেস উভয় ক্ষেত্রেই মাস্ক এবং চশমা পরা প্রয়োজন,” ডাঃ শেঠি বলেন।
সারসংক্ষেপ
- কনজাংকটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগটি হয় ভাইরাল নয়তো বা ব্যাকটেরিয়াল হতে পারে।
- এটি সরাসরি একে অপরের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
- অ্যাডিনোভাইরাস এবং কোভিড-19-এর মতো ভাইরাল ইনফেকশনের একটি উপসর্গ হল ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিস।
- যেহেতু গর্ভবতী মহিলা এবং প্রবীণ নাগরিকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই তাদের এটির দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করা এবং প্রেসক্রাইব করা আই-ড্রপ ব্যবহার করার মতো বিষয়গুলি এটির চিকিৎসাকে এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে সহায়তা করে।