এসেছে গরম। চাঁদি ফাটা রোদে আমাদের হাজার একটা বিরক্তির কারণ থাকতে পারে। একটা অন্তত আনন্দের বিষয় রয়েছে। কী বলুন তো! এ যে গ্রীষ্মকাল। আর গ্রীষ্মকাল মানেই তা ফলের রাজার সময়। প্রত্যেকটা মানুষ আমের জন্য একটা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। মুখিয়ে থাকেন, বৈশাখে কখন আম পাকবে। তবে ডায়াবেটিস রয়েছে যাঁদের, তাঁরা কিছুটা ধন্দে থাকেন। মরসুমে তাঁরা আম খেতে পারবেন তো? আপনি কী খাচ্ছেন, সে সম্পর্কে সতর্ক হওয়া জরুরি। বিশেষ করে, মিষ্টিজাতীয় যে কোনও খাবারের বিষয়ে তো অতিরিক্ত সতর্কতা দরকার। যদিও চিন্তার কোনও কারণ নেই। বিশেষজ্ঞদের সমাধান যখন আছে, তখন আর চিন্তা কীসের! ডায়াবেটিস রোগীরাও চাইলে সুস্বাদু এই ফলটি খেতে পারেন তাঁদের স্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনও আপস না করে। দিল্লির ডায়েটিশিয়ান অবনী কউল জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস রোগীরাও সুষম খাদ্য়ের অংশ হিসেবে পরিমিত পরিমাণে আম খেতে পারেন। তাঁর কথায়, “আম খাওয়ার আগে এমনই কিছু খেতে হবে, যাতে শরীরে কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব না পড়ে।”
আমের আগে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান
আমে যেহেতু খুব স্বাভাবিক ভাবেই সুগারের মাত্রা বেশি থাকে, তাই তা রক্তে গ্লুকোজ়ের মাত্রাকেও ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের খুব ভাবনা চিন্তা করে তারপরে আম খেতে হবে। নয়াদিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ রিচা চতুর্বেদী পরামর্শ দিয়েছেন যে, যে কোনও সময়ের খাবার আম দিয়ে শুরু করার পরিবর্তে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরে আম খান। যেহেতু ফাইবার আপনাকে পরিপূর্ণ রাখে, তাই বেশি আম খাওয়া এড়াতে পারবেন।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য আমের আগে প্রোটিন বা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া আসলে রক্তে শর্করার মাত্রার উপরে তার প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। ব্যাঙ্গালোরের পুষ্টিবিদ পলক পুনামিয়া বলছেন, “আঁশযুক্ত খাবার যেমন গোটা শস্য, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি আম থেকে চিনির শোষণকে মন্থর করে দিতে পারে এবং রক্তে গ্লুকোজের দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করে।” পলকের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত চেন্নাইয়ের গ্লেনিগেলস হাসপাতালের কনসালটেন্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডাঃ গুরুলক্ষ্মী মূর্তি। তাঁর সংযোজন, “হাল্কা খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আম খাওয়ার আগে ভারী খাবার খেলে তা সুগারের মাত্রা বাড়ানোর কারণ হতে পারে।”
সময়টা ঠিক করতে হবে
কউল বলছেন, “ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং আম খাওয়ার মধ্যে অন্তত 30 থেকে 60 মিনিটের ব্যবধান রাখা উচিত।” ডাঃ মূর্তির সতর্কবার্তা, রাতে ঘুমানোর আগে কখনও আম খাবেন না, তার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তিনি আরও যোগ করে বলছেন, “ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চের পরে আম খাওয়া ভাল। কখনই ডিনারের পর আম খাওয়া উচিত নয়। তাছাড়া আম খাওয়ার পরে হাঁটাহাঁটি করলে তা ক্যালোরি বার্ন করতেও সাহায্য করে।”
সংযমই চাবিকাঠি
ডাঃ মূর্তির কথায়, “কেউ চাইলে একটা আমকে একটা রুটি বা সামান্য কিছুটা ভাতের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করতে পারেন। সে ভাবেই এটিকে খাবারে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।” উদাহরণ দিয়ে তিনি বলছেন, “চালের পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং তার পরিবর্তে আম খান। খেয়াল রাখবেন, আমের পরিমাণ যেন চালের কাপের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি না যায়।” আমের বৈচিত্র্য অনুযায়ী বিভিন্ন আমের আকার নানাবিধ হতে পারে। সেই দিকটা মাথায় রেখেই ডাক্তাররা একপ্রকার জোর দিয়েই বলছেন, আম তে সে যে জাতেরই হোক না কেন, তার পরিমাণ এক কাপের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। একটার বেশি আম তো কখনই খাওয়া উচিত নয়।
কউল বলছেন, নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হল কতটা পরিমাণে আপনি খাচ্ছেন। তিনি বলছেন, “একটা আম খাওয়ার পরিমাণ প্রায় 15 গ্রাম কার্বোহাইড্রেটের সমান।” আকারে ছোট আমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা আরও কার্যকর ভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে।
বাদাম, বিভিন্ন বীজ বা অ্যাভোকাডোর সঙ্গে আম খাওয়া যেতে পারে, যাতে সুগারের পরিমাণ সহজে বাড়বে না। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কোন আমগুলি খেলে ডায়াবেটিস রোগীরা নিরাপদে থাকতে পারেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা GI রয়েছে এমন ভারতীয় আমের জাতগুলিকে বেছে নেওয়া একটি ভাল বিকল্প হতে পারে। ডায়েটিশিয়াল কউলের বক্তব্য, “আলফানসোর তুলনায় ল্যাংরা এবং তোতাপুরীর মতো জাতের আমে GI কম থাকে।”
প্রয়োজন সতর্কতা
1. আম খাওয়ার প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পরে আপনার সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করুন।
2. একবারে একটার বেশি ফল খাওয়া উচিত নয়।
3. চিনি বা দুধ দিয়ে আম খাওয়া, মিল্কশেক বা জুস এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে।
4. মিষ্টি খাওয়ার পর আম এড়িয়ে চলুন। আপনি যখন একটি ফল খাবেন, তখন সেটিকেই ডেজ়ার্ট হিসেবে খান।
5. আম খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বিশেষ করে যদি আপনি ইনসুলিন নেন বা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে অতি অবশ্যই কথা বলতে হবে।
মোদ্দাকথা
ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষজন গরমে আম খেতে পারবেন না এমনটা নয়। তবে কতটা খাবেন, কখন খাবেন, খাবার আগে নাকি পরে খাবেন, এই সব বিষয়গুলি মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আম খাওয়ার আগে ফাইবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে। আম গোটা খাওয়া থেকে তা কয়েকটা টুকরো করে খেয়ে নিতে হবে। এক কাপের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি খাওয়া চলবে না। রাতে খাওয়ার পরে আম খাওয়া উচিত নয়। সকালে বা দপুরে খাবার পরে ফলের রাজাকে আপনি স্বাদরে গ্রহণ করতে পারেন।