2016 সালের হিন্দি রেসলিং ছবি ‘দঙ্গল’-এ ছোট্ট ববিতা ফোগাটের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই বলিউড অভিনেত্রী সুহানি ভাটনগর মাত্র 19 বছর বয়সেই মারা গেলেন। বিরল ডার্মাটোমায়োসাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে এত কম বয়সে প্রাণ হারালেন সুহানি। ত্বকের ছোট্ট একটা ফুসকুড়ি এতটা যে বড় আকার ধারণ করতে পারে, ভাবতে পারেননি সুহানির পরিবারের লোকজন। ডার্মাটোমায়োসাইটিস হল একটি বিরল অটোইমিউন অবস্থা, যা মানবদেহের পেশির প্রদাহ এবং দুর্বলতার সৃষ্টি করে। এছাড়াও এই রোগে আক্রান্ত হলে খাদ্যনালীর কর্মহীনতা এবং ইন্টারস্টিশিয়াল ফুসফুসের মতো একাধিক অন্যান্য সমস্যাও দেখা যায়। নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (AIIMS)-এ চিকিৎসাধীন ছিলেন সুহানি।
“ডার্মাটোমায়োসাইটিসের মতো প্রদাহজনিত অটোইমিউন রোগটি যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও অবস্থাটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক,” বলছেন চেন্নাইয়ের পিডিআর অর্থোপেডিক হাসপাতালের চিফ অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ ডি গোকুলরাজ। ডার্মাটোমায়োসাইটিসের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ত্বক এবং পেশির বায়োপসি অপরিহার্য। তিনি বলেন, “এই রোগ সাধারণত 10 থেকে 15 বছর বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। তবে তা 40-60 বছরের প্রাপ্তবয়স্কদেরও প্রভাবিত করতে পারে।” ডাঃ গোকুলরাজ জানাচ্ছেন, এই রোগের নির্দিষ্ট কারণগুলি অস্পষ্ট। তবে তা একবার নির্ণয় করা গেলে ড্রাগ এবং স্টেরয়েড থেরাপি দিয়ে পরিচালনা করা যেতে পারে। তবে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হতে পারার বিষয়টা অস্থায়ী হতে পারে বলে জানালেন ডাঃ গোকুলরাজ। কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরলেন, পুনরায় সংক্রমণ হতে পারে যা ডার্মাটোমায়োসাইটিসের অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
ডার্মাটোমায়োসাইটিস এবং পেশির দুর্বলতা
এই অটোইমিউন রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল পেশির দুর্বলতা। “আক্রান্ত ব্যক্তিদের পায়ের পেশিতে তীব্র ব্যথা হয় এবং সেখানে যথেষ্ট দুর্বলতা থাকে। যার ফলে দৈনন্দিন কাজগুলি করা খুবই কঠিন হয়ে যায়,” বললেন ডাঃ গোকুলরাজ। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ আরও খারাপ হতে পারে এবং সেই সঙ্গেই পেশিতে ক্যালসিয়ামের একাধিক ব্লকও জমা হতে পারে।
ডার্মাটোমায়োসাইটিস এবং স্কিন র্যাশ
ডার্মাটোমায়োসাইটিসে আক্রান্ত হলে রোগীর ত্বকে বেশ কিছু র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়, যা এই রোগের আর একটি লক্ষণ। মুম্বইয়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পুনম ওয়াধওয়ানি বলছেন, “এই ফুসকুড়িগুলি মুখ, হাঁটু, হাতের পিছনে, চোখের পাতা এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও দেখা দিতে পারে।”
ডাঃ ওয়াধওয়ানি আরও যোগ করে বলেন, “আপনি আঙুলের নখের কিছু পরিবর্তন, চুল পড়া এবং মাথার ত্বকে আঁশযুক্ত ক্ষত লক্ষ্য করতে পারেন। কিছু লোকের ঘাড় থেকে বুক এবং কাঁধ পর্যন্ত চুলকানি হতে থাকে এবং V আকৃতির ফুসকুড়িও দেখা দিতে পারে।” এই ফুসকুড়ি বা র্যাশগুলি সাধারণত হেলিওট্রপ র্যাশ বা গটট্রন প্যাপিউলস দুই ভিন্ন ধরনের ফুসকুড়ি হতে পারে। হেলিওট্রপিক র্যাশ বেগুনি রঙের, যেগুলি সাধারণত চোখের উপরের পাতায় দেখা যায়। আবার, গটট্রন প্যাপিউলস হাতের পিছনের দিকে দেখা যায়, যার সঙ্গে স্কেলিং বা আলসারেশনও হতে পারে।
যেহেতু সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মি ফুসকুড়ি তৈরি করতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করার এবং যতটা সম্ভব ছায়ায় থাকার পরামর্শ দেন। ডাঃ ওয়াধওয়ানি বললেন, “চুলকানি বন্ধ করার জন্য চিকিৎসকরা অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধ এবং ফুসকুড়ির জন্য টপিকাল কর্টিকোস্টেরয়েড প্রেসক্রাইব করতে পারেন। এখন ফুসকুড়ির তীব্রতার উপর নির্ভর করে, ডাক্তাররা কখনও আবার ওরাল ইমিউনোমডুলেটরগুলি ব্যবহারেরও সুপারিশ করতে পারেন।”
ডার্মাটোমায়োসাইটিস: বিরল রোগ যখন প্রাণঘাতীও হতে পারে
পেশির দুর্বলতা, ত্বকের ফুসকুড়ি এবং বেদনাদায়ক ক্ষত ডার্মাটোমায়োসাইটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হলেও বিরল এই রোগ শরীরের অন্যান্য সিস্টেমকেও প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে আমাদের শরীরের সার্কুলেটরি সিস্টেম। প্রদাহজনিত এই অটোইমিউন ডিসঅর্ডারটি পায়ের আঙুলের রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে এবং তার সংযোগকারী কোষেও সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ডাঃ গোকুলরাজ বলছেন, “ডার্মাটোমায়োসাইটিস কখনও আবার হার্টের পেশিগুলিতে প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে এবং তার ফলে হার্ট ফেলিওরের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এছাড়াও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বুকের পেশি দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি নিউমোনিয়া এবং ফুসফুসের ফাংশনও দুর্বল হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজনের খাবার গিলতেও অসুবিধা হতে পারে।”
সবথেকে বড় কথা হল, ডার্মাটোমায়োসাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ডাঃ গোকুলরাজ সতর্ক করে বলেন, “কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ওভারিয়ান ক্যান্সার বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।”
মোদ্দাকথা
* ডার্মাটোমায়োসাইটিস একটি বিরল প্রদাহজনক রোগ যা প্রাথমিকভাবে ত্বকের ফুসকুড়ি এবং পেশির দুর্বলতা লক্ষ্য করেই চিহ্নিত করা হয়। একজন ব্যক্তি এই রোগে ভুগছেন কি না, তা নির্ধারণ করতে ত্বক এবং পেশির বায়োপসি অপরিহার্য।
* এই অটোইমিউন রোগের সঠিক কারণ অজানা। এটি যে কারও সঙ্গে ঘটতে পারে। তবে যত তাড়াতাড়ি এই রোগ নির্ণয় করা যায়, ততই ভাল ভাবে তা পরিচালনাও করা যায়।
* এই ব্যাধিতে যে বা যাঁরা ভুগতে থাকেন, তাঁদের তীব্র পেশি দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যার ফলে দৈনন্দিন কাজগুলি করা কঠিন হয়ে যায়। সূর্যের সংস্পর্শে আসা ত্বকে হেলিওট্রপ র্যাশ বা গটট্রন প্যাপিউলও দেখা যায়।