প্রতীকী ছবি/ শাটার স্টক
২২ বছর বয়সী অক্ষয় রাঠোরের ২০১৮ সালে একটা অভিজ্ঞতা হয়, যাকে তিনি বলেন “ঠান্ডা লাগার মত উপসর্গ”। ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই তিনি হাঁচতে থাকতেন। কখনও কখনও সেটা কয়েক ঘন্টা ধরে চলত। তিনি বাইরে বেরোতে ভয় পেতেন কেননা সামান্য হাওয়াতেও হঠাৎ করে তার অবিরাম হাঁচি শুরু হয়ে যেত। তার অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে ছিল নাক দিয়ে জল পড়া এবং চোখ ছলছল করা।
এই উপসর্গের জন্য নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপন্ন বোধ করায় তিনি একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার তার অ্যালার্জিক রাইনিটিস রোগ নির্ণয় করেন। তিনি দু’ই মাস ধরে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ওষুধ গ্রহণ করে খানিকটা স্বস্তি পান। যাই হোক না কেন তিনি সেগুলি বন্ধ করার পরে উপসর্গগুলি আবার ফিরে আসে।
তার এই অবস্থা থেকে দীর্ঘ-মেয়াদি সমাধানের খোঁজে তিনি গোয়ালিয়রের ওম হোমিওপ্যাথিক ক্লিনিকের ডঃ দেবেশ পাঠকের কাছে যান। তার বিস্তারিত ইতিহাস জেনে ডঃ পাঠক তাকে ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। রাঠোর বলেন, “ আমি একমাস ধরে ওষুধ খেয়েছিলাম এবং শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই ভালো বোধ করেছিলাম। আমার উপসর্গগুলির উন্নতি হওয়া শুরু হয়েছিল। ডঃ পাঠক আমাকে যে ওষুধগুলির পরামর্শ দিয়েছিলেন দীর্ঘমেয়াদি ফল পাওয়ার জন্য আমি সেগুলি ছ’মাস ধরে চালিয়ে গিয়েছিলাম”।
অ্যালার্জিক রাইনিটিস কি?
বেঙ্গালুরুর পদ্মা হোমিওপ্যাথিক হিলিং সেন্টারের কনসালট্যান্ট ডঃ ভরত মঞ্জুনাথ ব্যাখ্যা করেন, “ যখন কোন মানুষ ফুলের রেণু, ধুলো এবং গুড়ো মাটির মত অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসেন তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্দিষ্ট কিছু প্রদাহজনক রাসায়নিক ( যেমন হিস্টামিন এবং প্রোস্টাগ্ল্যানডিন) নিঃসরণ দ্বারা শরীরে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া করে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা জল পড়া, হাঁচি, চুলিকানি এবং চোখ ছলছল করার মত উপসর্গগুলির দিকে নিয়ে যায়”।
২০২২ সালে ফ্রনটিয়ার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, অবস্থার তীব্রতাকে পরিমাপ করা হয় কিভাবে ঘুম, প্রতিদিনের কাজকর্ম এবং স্কুল ও কাজের উৎপাদনশীলতার মত দিকগুলির ক্ষতি করে তার উপর নির্ভর করে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে ফুড অ্যালার্জেন যেমন বাদাম, আটা, দুধ এবং গৃহপালিত পশুর অ্যালার্জেন যেমন বিড়াল এবং কুকুরের খুশকি রোগের কারণ হতে পারে। অন্যান্য গৃহ মধ্যস্থ অ্যালার্জেনের মধ্যে রয়েছে ঘরের ধুলো পোকামাকড় এবং আরশোলা।
এই অবস্থা কোনো একজন ব্যক্তিকে বছরের যেকোনো সময়ে প্রভাবিত করতে পারে কিন্তু যেসব ঋতুতে বাতাসে পরাগ বেশি থাকে (বসন্ত এবং শরত) সেইসব ঋতুতে এর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
হোমিওপ্যাথি কিভাবে অ্যালার্জিক রাইনিটিস কাজ করে
ডঃ পাঠক বলেন, অ্যালার্জিক রাইনিটিসের জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ওষুধ প্রেসক্রাইব করার আগে একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল অন্যান্য শারীরিক অবস্থার সাথে একজন মানুষের জীবনের সকল দিকগুলিকে বোঝা। একজন মানুষের মানসিক এবং শারীরিক দিকগুলি, চিকিৎসা ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস এবং অন্যান্য উপসর্গগুলি একজন হোমিওপ্যাথের কাজে আসে। “ আমরা শুধুমাত্র অ্যালার্জিক রাইনিটিসের উপসর্গের উপরে মনোনিবেশ করি না। আমরা অন্যান্য উপসর্গগুলিকেও গুরুত্ব দিই যেমন, ঘুমের অথবা মলত্যাগের সমস্যা,” তিনি বলেন।
তাঁর মত অনুযায়ী সামগ্রিক উপস্থিতি সামগ্রিক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে । হোমিওপ্যাথির সাতটি আদর্শের উপরে ভিত্তি করে ওষুধ এবং জীবনযাত্রা পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে এবং একটি একক উপযুক্ত ওষুধ যেটি খুব কমই পুনরাবৃত্তি করা হয় সেটি বেছে নেওয়া হয়, ডঃ পাঠক বলেন।
ডঃ মঞ্জুনাথ বলেন, হোমিওপ্যাথি ওষুধ ধীরে ধীরে উপসর্গের তীব্রতা ও পুনরাবৃত্তিকে কমাতে থাকে যার ফলে জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটায়।
বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কয়েকটি পরামর্শ
- যেগুলির কারণে উপসর্গ বাড়তে পারে সেইসব কারণগুলিকে চিহ্নিত করা এবং এড়িয়ে চলা। মাস্ক ব্যবহারে শ্বাসের সাথে অ্যালার্জেন প্রবেশের সংখ্যা কমানো যেতে পারে , যদিও এটি অনাবৃত অবস্থাকে দূর করতে পারে না। মাস্কের প্রভাবকে সর্বোচ্চ করার জন্য এটি সঠিকভাবে পরা এবং পরিস্কার রাখাকে নিশ্চিত করুন।
- চারপাশ পরিস্কার এবং ধুলো মুক্ত রাখুন।
- রেণু সংখ্যা এবং ঋতুর দিকে নজর দিন এবং যতখানি সম্ভব বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- ঘরের ভিতর শুষ্ক রাখুন কেননা আর্দ্রতা/স্যাঁতসেঁতে জায়গায় প্রায়ই ছত্রাক বা ছাতা জন্মায় যেটি হঠাৎ করে অনেক কিছু বাধাবার একটি কারণ
- সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং উপসর্গের তীব্রতাকে কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সাহায্য করতে পারে।