সাঁতার কাটা সুধীর কুমারের কাছে দৈবাৎক্রমে ঘটে গেছে। শিশুকালে সুধীর হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ডাক্তাররা অনেক রকমের চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু কোনওটাতেই তাঁর শ্বাসকষ্টের স্থায়ী সমাধান হয় নি। ডাক্তার তাঁকে সাঁতার শেখার সুপারিশ করেন। “এটি ঘুরেফিরে একটি আশীর্বাদে পরিণত হয়,” বলেন ব্যাঙ্গালোরের ৪৫ বছর বয়স্ক নিবাসী।
“প্রথমদিকে আমি প্রতি শনি-রবিবার সাঁতার কাটতাম। পুলে ভিড় থাকার কারণে সাঁতার শেখা নিয়ে কোনও তাড়াহুড়ো না থাকায়, আমার আনন্দেই সময় কাটছিল”।
মাঝেমধ্যে পুলে গিয়ে সাঁতার কাটায় কোনও লাভ হচ্ছিল না। পেশাদার কোচের কাছে সাঁতার শেখা শুরু করার পরে তিনি তার হাঁপানির উন্নতি লক্ষ্য করেন।
পেশাদারী সাঁতার শুরু করা
সুধীর বলেন, “আমার বাবাও একজন সাঁতারু ছিলেন, আমার মধ্যে সাঁতার, পেশা হিসাবে নেবার সম্ভাবনাকে তিনি চিনতে পেরেছিলেন।” পেশাদারী সাঁতারে যোগ দেওয়ার পরে, তিনি প্রতিদিন পুলে আট ঘন্টার প্রশিক্ষণ নিতেন।
“প্রথমদিকে আমার হাঁপানি বেড়ে গিয়েছিল, আমি সাঁ সাঁ করে নিঃশ্বাস নিতাম আর বেশিক্ষণ সাঁতার কাটতে পারতাম না। এক বছর ধরে এক নাগাড়ে প্রশিক্ষণ নেবার পরে, আমি লক্ষ্য করলাম যে আমার ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ছে,” তিনি বলেন।
সুধীরের দক্ষতা ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে থাকল। তিনি সাঁতারের বিভিন্ন চ্যাম্পিয়নশিপগুলি জিততে থাকলেন। তিনি ১৬ বছররে ঊর্দ্ধে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে কর্ণাটকের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আর এশিয়া প্যাসিফিক চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতেরও প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
সুধীর বলেন, “সঠিক অভিভাবকত্বে নিজেকে ধারাবাহিক ভাবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হল মূল চাবিকাঠি”। তার বহু সম্মানিত সাঁতারের কেরিয়ারের সময়কালীন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাগুলিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে সুধীর ৭০টি বাচ্চাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
সাঁতার কি বাচ্চাদের হাঁপানির উন্নতি ঘটায়?
হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অন্যান্য ধরণের শারীরিক ক্রিয়াকলাপের চেয়ে সাঁতারে সুবিধা বেশী। ডাঃ সুলাইমান লাধানি, কনসাল্টেন্ট চেষ্ট ফিজিসিয়ান ওয়াকহার্ট হাসপাতাল মুম্বাইয়ের মতে, শিশুদের সাঁতার শিক্ষা হাঁপানির লক্ষণগুলিকে কমাতে সাহায্য করতে পারে। “ঠান্ডা, শুষ্ক আবহাওয়ায় ব্যায়াম করা যা হাঁপানির সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, তার তুলনায় সুইমিং পুলের উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ শ্বাসনালীকে খোলা রাখতে, শ্বাস–প্রশ্বাসকে বাড়াতে সাহায্য করবে,” ডাঃ লাধানি বলেন।
“মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মতো মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলিও হাঁপানির লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে। এই ধরনের কারণগুলিকে দূরে সরিয়ে রেখে সাঁতার, মনকে সুস্থ রাখে,” তিনি যোগ করেন।
শেষাদ্রিপুরম, ব্যাঙ্গালোরের অ্যাপোলো হাসপাতালের অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট, পেডিয়াট্রিক্স, ডাঃ হরিদর্শন জি জে, বলেন, “অন্যান্য বাইরে করা ব্যায়ামের তুলনায় সাঁতারের সময় পরাগ এবং খড়ের মতো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শ কম থাকে৷”
ডাঃ লাধানি পুলগুলিকে জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত ক্লোরিন সম্পর্কে সতর্ক করেছেন৷ তিনি বলেন, “পুলে ব্যবহৃত ক্লোরিন এবং অন্যান্য রাসায়নিকগুলি ঘাম এবং প্রস্রাবের সাথে মেশে, যা রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে গ্যাস নির্গত করে শ্বাসনালীতে জ্বালা ধরাতে পারে, যা হাঁপানির কারণ হতে পারে”।
সাঁতার ফুসফুসের ক্ষমতার উন্নতি করে
২০১২ সালে সাঁতারু ও দৌড়বীদদের মধ্যে ফুসফুসের ক্রিয়াকলাপের একটি তুলনামূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে সাঁতারুদের ফুসফুসের ক্ষমতা বেশী রয়েছে।
“সাঁতার কাটার সময়, আপনার হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায় এবং আপনি দ্রুত শ্বাস নেন, যা আপনার ফুসফুসের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে,” বলেন ডাঃ সার্থক রাস্তোগি, কনসালটেন্ট–পালমোনোলজি, এসএল রাহেজা হাসপাতাল, মহিম – ফোর্টিস অ্যাসোসিয়েট
“কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য এবং মনোবলের উন্নতির সাথে সাথে আপনি আরও ভাল শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা লাভ করেন,” ডাঃ রাস্তোগি যোগ করেন।
ডাঃ হরিদর্শন এর মতে, আনন্দমূলক সাঁতার হাঁপানির লক্ষণগুলি কমাতে পারে। “ফুসফুসের ক্রিয়াকলাপের উন্নতির জন্য দীর্ঘদিন সাঁতার কাটা দরকার,” তিনি বলেন।
সাঁতার তাড়াতাড়ি শুরু করার সুবিধা
কর্ণাটক সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সচিব, সতীশ কুমার, ছোটবেলায় সাঁতার শেখার পরামর্শ দেন কারণ শৈশবে নতুন দক্ষতা অর্জন করা সহজ হয় কারণ তখনও মস্তিষ্কের বিকাশ হচ্ছে এবং , “শিশু হিসাবে, সাবলীলতা এবং ছন্দ একজন প্রাপ্তবয়স্কের চেয়ে ভালভাবে আয়ত্ত করা যায়,” তিনি উল্লেখ করেন। সাঁতার শেখা শুরু করার জন্য আদর্শ বয়সের উপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, “বাচ্চাদের ছয় মাস বয়স থেকেই সাঁতারে দেওয়া যেতে পারে, কমপক্ষে ৫-৬ বছরের মধ্যে সাঁতারের ক্লাস শুরু করা উপকারী হতে পারে যা বয়সকালে সুস্বাস্থ্য উপহার দেবে।
“বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষের মধ্যে জলের প্রতি ভয় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ধরনের ভয় তৈরি হওয়ার আগে সাঁতার শিখে নেওয়াটা আরও ভালভাবে সাঁতার শিখতে এবং ভবিষ্যতে এই আতঙ্কগুলিকে বাড়তে না দিতে সাহায্য করতে পারে,” ডাঃ লাধানি বলেন।
হাঁপানি সহ সাঁতারের জন্য সতর্কতা
যদিও সাঁতার হাঁপানির উপসর্গে সাহায্য করতে পারে, তবুও পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন না করলে বিপরীত ফল হতে পারে। সাঁতার কাটতে যাওয়ার সময় যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ডাঃ রাস্তোগি তার তালিকা দিয়েছেন।
- সন্তানের হাঁপানির উপসর্গগুলি থাকাকালীন তাকে সাঁতার কাটতে দেবেন না। যদি আপনার সন্তানের হাঁপানির উপসর্গগুলি কমানো যায় তবেই পুলে প্রবেশ করার সাহস দেখান ।
- নিশ্চিত করুন যে ব্যায়াম–প্ররোচিত হাঁপানি এড়াতে নির্ধারিত ওষুধ এবং ইনহেলারগুলি ধারাবাহিকভাবে নেওয়া হয়েছে।
- ক্লোরিন এবং অন্যান্য রাসায়নিকগুলি থেকে হাঁপানির উপসর্গগুলিকে বাড়তে না দেওয়ার জন্য জায়গাটিতে ভাল বায়ুচলাচল রয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করুন।
- পুলের জলে ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলির মধ্যে কোনও ভারসাম্যহীনতা নেই সেটা নিশ্চিত করুন।
- একটি বাড়তি ইনহেলার হাতের কাছে রাখুন এবং সাঁতার কাটার আগে এটি ব্যবহার করুন।
- সাঁতার কাটার আগে ওয়ার্ম আপ করুন বা শরীরকে গরম করে নিন এবং সাঁতার কাটার পরে শরীরকে ঠান্ডা করুন।
- সাঁতার কাটার আগে স্নান করে নিন।
সারসংক্ষেপ
- পুলের উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশ হাঁপানির উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- জলে ক্লোরিনের ভারসাম্যহীনতা এমন গ্যাস নির্গত করতে পারে যা হাঁপানির কারণ ঘটাতে পারে।
- বেশি বয়সের তুলনায় শৈশবে সাঁতার শেখা দ্রুততর এবং সহজতর।
- হাঁপানির উপসর্গগুলি থাকাকালীন সাঁতার কাটতে যাবেন না।