ভোজ্য মাশরুম কার্যকরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যা হঠাৎ ব্লাড সুগারের মাত্রার বৃদ্ধি হওয়াকে প্রতিরোধ করে, সেটি ছাড়াও মাশরুম পুষ্টিতে ঠাসা রয়েছে, এতে আছে একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ইনসুলিনের ক্রিয়াকলাপের উপর সেটির বিরূপ প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন যে মাশরুমে লো গ্লাইসেমিক লোড রয়েছে (খাওয়ার পরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় প্রত্যাশিত বৃদ্ধির অনুমান), যা এদের অ্যান্টি-ডায়াবেটিক আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যা এদের ডায়াবেটিস-ফ্রেন্ডলি মেনুর জন্য নিখুঁত উপাদান করে তোলে।
হায়দ্রাবাদের কামিনেনি হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডাঃ সন্দীপ রেড্ডি বলেন, ক্যালোরি কম থাকার পাশাপাশি মাশরুম ভিটামিন D-এর একটি ভাল উৎস, যা ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের কাছে এটিকে খাদ্যের এক ভাল বিকল্প হিসাবে তুলে ধরে। ছত্রাকের লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং গ্লাইসেমিক লোড আপনার ব্লাড সুগারের মাত্রাকে প্রভাবিত করে না। “মাশরুমেতে কার্বোহাইড্রেট কম থাকে; আসলে, এগুলি উচ্চ প্রোটিনের উৎস,” তিনি আরও বলেন।
কোচির একজন ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট কন্সাল্ট্যান্ট ডাঃ মুমতাজ খালিদ ইসমাইলের মতে, মাশরুমে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার উভয়ই থাকে, যা হঠাৎ ব্লাড সুগারের বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি কারুকে পরিতৃপ্ত বোধ করিয়ে অতিরিক্ত খাবার খবর খাওয়া থেকে বিরত করে।
মাশরুম এবং ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট
ডাঃ রেড্ডি বলেন যে মাশরুম ফসফেট, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ, যা ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টের জন্য ভাল বলে বিবেচিত হয়। তবে অতিরিক্ত সেলেনিয়াম গ্রহণের নেতিবাচক প্রভাবও থাকতে পারে। অতএব, সংযম রাখা গুরুত্বপূর্ণ। “মাশরুমে বিটা-গ্লুকানও আছে, এটি এমন একটি ফাইবার যা পেট খালি হওয়া এবং গ্লুকোজ শোষণকে বিলম্বিত করে,” তিনি আরও বলেন।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে মাশরুমে জিঙ্ক রয়েছে, যা গ্লুকোজ বিপাকের সাথে জড়িত। সাধারণত, ১০০ গ্রাম মাশরুমে প্রায় ১.৪ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে। তবে জিঙ্কের পরিমাণের সেটির ধরণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। ইনসুলিন সেনসিটিভিটিকে উন্নত করার পাশাপাশি, জিঙ্ক অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণকে উন্নত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা অনুসারে, মাশরুমে পলিস্যাকারাইড নামে এমন একটি মুখ্য যৌগ পাওয়া যায় যেটির অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। পলিস্যাকারাইডের গ্লুকোজ শোষণের ক্ষমতাকে কম করে এবং ইনসুলিন সেনসিটিভিটিকে বাড়িয়ে তুলে অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক প্রভাব তৈরি করার ক্ষমতা আছে।
উপরন্তু, মাশরুমে এর্গোথিওনিন এবং গ্লুটাথিয়নের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ঠাসা থাকে। এগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে, যা করোনারি আর্টারি ডিজিজ, ডায়াবেটিস এবং ডিমেনশিয়া সহ বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে।
ডঃ ইসমাইল বলেন, ‘মাশরুম পটাসিয়াম এবং ফোলেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্টগুলির এক চমৎকার উৎস। গ্লাইসেমিক কন্ট্রোলকে উন্নত করে ফলিক অ্যাসিড যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে তা দেখানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে ১০০ গ্রাম মাশরুমে প্রায় ৩১৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং প্রায় ৮ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট (ফলিক অ্যাসিড) থাকে।
কোন মাশরুমের জাত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে?
ডঃ রেড্ডির মতে, “বিভিন্ন ধরণের মাশরুম রয়েছে, বনে জঙ্গলে যে মাশরুমগুলি হয়ে থাকে তাতে আরও ভাল মিনারেলস আছে। অয়েস্টার মাশরুমগুলিও অবশ্য এক ভাল বিকল্প, কারণ এই ধরণের মাশরুমগুলিও তাদের অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্যগুলির পাশাপাশি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণাবলীর জন্য পরিচিত। উপরন্তু, সেগুলিতে বেশি মাত্রায় প্রোটিন এবং কম মাত্রায় কার্বহাইড্রেট থাকার কারণে, অয়েস্টার মাশরুমগুলি ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় না।
ময়মনসিংহ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় অয়েস্টার মাশরুমের অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্যকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই গবেষণাটিতে ডায়াবেটিস আছে এমন ৮৯ জন ব্যক্তিকে এক সপ্তাহের জন্য অয়েস্টার মাশরুমের রস খেতে দেওয়া হয়েছিল। পরের সপ্তাহে তাদের তা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছিল এবং তার পরের সপ্তাহে পুনরায় দেওয়া হয়েছিল। ফলাফলে দেখতে পাওয়া যায় যে সেইসব ব্যক্তিদের ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা তারা নির্যাস খাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়ে গিয়েছিল।
ডায়েটে মাশরুমকে অন্তর্ভুক্ত করা
ডাঃ ইসমাইলের মতে, মাশরুম – বিশেষত বাটন মাশরুম (সর্বাধিক ব্যবহৃত মাশরুমের জাত) – ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের তাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি ভাল বিকল্প কারণ এতে কম ক্যালোরি থাকে। তিনি আরও বলেন যে ১০০ গ্রাম বাটন মাশরুমে প্রায় ২৭.৪৯ ক্যালোরি থাকে।
তিনি আপনার ডায়েটে মাশরুমকে অন্তর্ভুক্ত করার কয়েকটি উপায় বাতলে দেন:
- মাশরুমকে ডিমের সাথে মিলিয়ে পুষ্টিকর আমলেট তৈরি করা যেতে পারে। মাশরুমকে স্যান্ডউইচ বা র্যাপগুলিতেও যোগ করা যেতে পারে।
- মাশরুম এবং তাজা সবুজ মটরের সংমিশ্রণ ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য কম ক্যালোরিযুক্ত, ফাইবার সমৃদ্ধ বিকল্প প্রদান করে।
- মটরশুটি এবং গাজরের পাশাপাশি স্যুপেও মাশরুম দেওয়া যেতে পারে।
“প্রতিদিন প্রায় ২০০ গ্রাম মাশরুম খাওয়া ভালো,” বলেন ডঃ রেড্ডি।
কাঁচা মাশরুম কখনই খাবেন না
“মাশরুম কখনই কাঁচা খাওয়া উচিত নয়,” ডঃ ইসমাইল সতর্ক করেন। মাশরুমকে সর্বদা রান্না বা সিদ্ধ করার পরে খাওয়া উচিত। তবে যাদের মাশরুমে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের মাশরুম খাওয়া এড়ানো উচিত।
সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে, মাশরুমগুলি ব্যবহারের আগে সর্বদা ভালভাবে পরিষ্কার করা উচিত, ডাঃ ইসমাইল পরামর্শ দেন। তিনি তুলে ধরেন যে মাশরুমের তুলনামূলকভাবে দুই থেকে তিন দিনের শেল্ফ লাইফ রয়েছে এবং নষ্ট হওয়া এড়াতে সেই সময়সীমার মধ্যেই মাশরুম খাওয়া উচিত।
সংক্ষিপ্তসার
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল ডায়াবেটিস-ফ্রেন্ডলি ডায়েট অনুসরণ করা। কম ক্যালোরি যুক্ত, নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ, এবং লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হওয়ার কারণে মাশরুমকে এই ক্ষেত্রে একটি ভাল বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে মাশরুম কখনই কাঁচা খাওয়া উচিত নয়। পুষ্টিকর আমলেট তৈরি করতে ডিমের সাদা অংশের সাথে মাশরুম যোগ করতে পারেন। উপরন্তু, স্যান্ডউইচ এবং স্যুপেও এগুলিকে দেওয়া যেতে পারে।