কয়েক দিন আগেই কোভিড ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছিল। এবার তাদের সেই ভ্যাকসিন বাজার থেকে তুলেও নিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা। অ্যাংলো-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাটি তাদের কোভিড ভ্যাকসিন ভ্যাক্সজেভরিয়া প্রত্যাহার করেছে। বিশ্বজুড়ে কোভিড অতিমারির সময় প্রথম উৎপাদিত কোভিড ভ্যাকসিনগুলির একটি হল এই ভ্যাক্সজেভরিয়া। কিন্তু এই টিকা কেন তুলে নেওয়া হল? গত বুধবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার তরফ থেকে চাহিদা হ্রাস পেয়েছে বলে ‘বাণিজ্যিক কারণ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার একজন মুখপাত্রা বলেছেন, “যেহেতু একাধিক ভ্যারিয়েন্টে কোভিড-19 ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে, তা একটা বড় অংশের মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে আপডেটেড ভ্যাকসিন এখন পড়ে আছে। ফলে, ভ্যাক্সজেভরিয়ার চাহিদা হ্রাস পয়েছে। সেই কারণেই নতুন করে আর উৎপাদন বা সরবরাহ করা হচ্ছে না।”
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “কোভিড অতিমারির সময় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার পর এবার এই অধ্যায়টি এবার আমরা শেষ করতে চাইছি। তার জন্য নিয়ন্ত্রক এবং অংশীদারদের সঙ্গে আমরা কাজও করছি।”
2020 সালের মার্চ মাসে বিশ্বজুড়ে কোভিড-19 ভাইরাস অতিমারির আকার ধারণ করেছিল। সে সময় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কোভিড ভ্যাকসিন বানাতে সক্ষম হয়েছিল ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার পাশাপাশি এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে হাত লাগিয়েছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে 2021 সালের শেষ দিকে লাভ করার জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকা এই ভ্যাকসিনটি বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্ব এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিনের দিকে ঝুঁকেছে। বিশেষ করে মার্কিন ড্রাগ প্রস্তুতকারক সংস্থা ফাইজার এবং জার্মান পিয়ার বায়োএনটেকের উৎপাদিত টিকা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে তার আগেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিরল রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যার কারণে সেই ভ্যাকসিন নেওয়া নিয়ে জনসাধারণের দ্বিধা বেড়েছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার এই বিষয়টি স্বীকারও করে নিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
বিশ্বব্যাপী কোভিড বিধিনিষেধ পুরোপুরি তুলে নেওয়ায় এবং সেই সঙ্গেই আবার এই বিরাট স্বাস্থ্য সংকট থেকে বিশ্ব বেরিয়ে আসার পরে অ্যাস্ট্রার এই টিকার বিক্রিবাট্টাও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার (ইএমএ) বাজার থেকে ইতিমধ্যেই এই টিকা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
ভ্যাক্সজেভরিয়ার জন্য বাজারের অনুমোদন প্রত্যাহার শুরু করতে সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী অন্যান্য নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে কাজ করবে। ওই মুখপাত্রের কথায়, “ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের কোনও বাণিজ্যিক চাহিদা প্রত্যাশিত নয়”। তিনি আরও যোগ করে বলছেন, “টিকার ব্যবহার শুরু হওয়ার প্রথম বছরেই 65 লাখেরও বেশি জীবন রক্ষা পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী তিন বিলিয়নেরও বেশি ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। ”
“বিশ্বব্যাপী অতিমারি শেষ করতে ভ্যাক্সজেভরিয়া যে ভূমিকা পালন করেছে, তাতে আমরা অবিশ্বাস্য ভাবে গর্বিত। আমাদের প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে সমস্ত দেশের সরকার দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে,” বলছেন ওই মুখপাত্র।