গোটা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি, ডেঙ্গুর ভুল টেস্ট রেজাল্ট নিয়েও দেশবাসী ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। ডাক্তাদের কাছেও ডেঙ্গুর ভুল এবং বেঠিক টেস্ট রেজাল্ট প্রচুর পরিমাণে জমা পড়ছে যাতে ডেঙ্গুর মতন অন্যান্য জ্বরের উপসর্গকেও ডেঙ্গু হিসাবে দেখানো হয়েছে এমন কেসও আছে।
কোনও ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও টেস্ট রেজাল্ট অনেকসময় ভুল বা পজিটিভ হওয়ার পরিবর্তে নেগেটিভ আসছে। করোনা অতিমারীর সময়ও ঠিক এমনটা ঘটেছিল, ভুল এবং নেগেটিভ রিপোর্ট বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুর সেরকম ভাবে কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় এই রোগের ভুল এবং নেগেটিভ রিপোর্ট তেমন কোনও অসুবিধা তৈরি করে না।
সম্প্রতি ব্যাঙ্গালোরের পাঁচ বছর বয়সী এক বালক জ্বর, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, মায়ালজিয়া এবং ক্ষুধা কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ অনুভব করতে থাকে। তাকে প্যারাসিটামল এবং লোজেঞ্জের মতো ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তবে পাঁচ দিন পরেও লক্ষণগুলি হ্রাস পায়নি, যার ফলে তার বাবা মা বাচ্চাটির চিকিৎসা জারি রাখেন।
ব্যাঙ্গালোরের আথ্রেয়া হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ নারায়ণস্বামী এস বলেন, “গুরুতর মায়ালজিয়ার কারণে ছেলেটির হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিল এবং তার শরীর জলশূন্যও হয়ে পড়েছিল। “বাচ্চাটির উপসর্গগুলি ইঙ্গিত দেয় বাচ্চাটির ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এবং তাই তাকে ভর্তিও নেওয়া হয়। কিন্তু ক্লিনিক্যাল সন্দেহের বিপরীতে গিয়ে ডেঙ্গু শনাক্তের র্যাপিড ও এলিসা পরীক্ষায় ছেলেটির রক্তের নমুনা নেগেটিভ আসে।
এলিসা – একটি স্ক্রিনিং পরীক্ষা যা কোনও প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিজেন এবং / অথবা অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সনাক্ত করে – ডেঙ্গুর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী টেস্ট হিসাবে যা স্বীকৃত।
বাচ্চাটির ব্লাড কাউন্ট রিপোর্ট দেখায় তার প্লেটলেট সংখ্যা কমে গিয়েছিল। স্বাভাবিক ১.৫ লাখ থেকে ৫ লাখ প্লেটলেট কাউন্টের পরিবর্তে, তার কাউন্ট ১ লাখ ছিল। এবং তার শ্বেত রক্ত কণিকা (WBC) ১০০০ এর নিচে ছিল – স্বাভাবিক ৪৫০০ থেকে ১১,০০০ WBC প্রতি মাইক্রোলিটারের পরিবর্তে।
এই ক্ষেত্রে এটি ডেঙ্গু ছিল অথবা ডেঙ্গুর মতন অন্য কোনও জ্বর ছিল।
ডায়াগনোসিস করে জানা যায় এটি একটি অজানা জ্বর। ছেলেটিকে অসুখ অনুসারে চিকিৎসা শুরু হয়। আইভি ফ্লুইড এবং পেইনকিলার চিকিৎসার কাজে নিরাময়ক হিসাবে ব্যবহার হয়। ডেঙ্গু পুনরুদ্ধারে পুষ্টি খুব গুরুত্বপূর্ণ, ডেঙ্গু হলে কম চর্বি যুক্ত খাবার এবং বেশি করে তরল খাওয়া দরকার।
ছেলেটি তিন দিনে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নেগেটিভ রেজাল্টের কারণ কী?
দিল্লির স্যানেটিভ হেলথকেয়ারের কনসালট্যান্ট সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ছবি গুপ্তার মতে, ভুয়া-নেতিবাচক রিপোর্টের জন্য দায়ী কারণগুলির মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা, নমুনা সংগ্রহ, টেস্ট কিটের ভুল এবং ব্যবহৃত ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন এবং ডেঙ্গু অ্যান্টিবডির গুণমান।
ডাঃ গুপ্তা বলেন, “প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে, ভাইরাসটি শরীরে সঞ্চালিত হয়, এটি তাই অ্যান্টিজেন দ্বারা নির্ণয় করা উচিত।
“এর পরে পরেই অ্যান্টিজেন হ্রাস পায় এবং অ্যান্টিবডি বৃদ্ধি পায়। র্যাপিড টেস্টিং কিট বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি আইজিএম এবং আইজিজির উপস্থিতি সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। যদিও আইজিএম অ্যান্টিবডিগুলির অর্থ বর্তমান সংক্রমণ, আইজিজি অ্যান্টিবডিগুলি দেখায় যে ব্যক্তির কয়েকদিন আগেও সংক্রমণ হয়েছিল।
মুম্বাইয়ের মিরা রোডের ওয়াকহার্ট হসপিটালের ইন্টারনাল মেডিসিনের কনসালট্যান্ট ড. অনিকেত মুলে বলেন, “কেস সিনারিওর উপর ভিত্তি করে সতর্কতার সাথে টেস্ট করার কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার দিনটিও গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রাথমিক দিনগুলিতে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার আদেশ দেওয়া হয় এবং অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে তবে এটি ভুল রিপোর্ট দিতে পারে।
এনএস১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা করলেই সংক্রমণ ধরা পড়ে- অর্থাৎ উপসর্গ দেখা দেওয়ার প্রথম সাত দিনের মধ্যে।
ডাঃ গুপ্তা বলেন, “কোন পরীক্ষাটি ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব এবং ল্যাবে কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটিও ভুল-নেগেটিভ রিপোর্টের কারণ হতে পারে (যদি র্যাপিড টেস্ট করা হয়ে থাকে)। “যদি সন্দেহ খুব বেশি হয় তবে অনুমোদিত এলিসা কিট দিয়ে নিশ্চিত ভাবে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
ডাক্তাররা আরও বলেন, সিম্পটমিটিক চিকিৎসা তখনই করা হয় যখন ভুল এবং নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
♦ ডেঙ্গুর ভুয়া-নেতিবাচক কেস বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
♦ ভুল-নেগেটিভ ফলাফল গুলি হ’ল যখন কোনও ব্যক্তি সংক্রামিত হওয়া সত্ত্বেও ভাইরাসটি সনাক্ত করতে পারে না।
♦ ভুল-নেগেটিভ রিপোর্টের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পরীক্ষায় ত্রুটি, নমুনা সংগ্রহ, টেস্টিং কিটের গাফিলতি এবং ব্যবহৃত ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন ও ডেঙ্গু অ্যান্টিবডির গুণগত মান।
♦ ডেঙ্গু পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে র্যাপিড ডেঙ্গু আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট, র্যাপিড ডেঙ্গু আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট, ডেঙ্গু এলিসা টেস্ট, ডেঙ্গু ফিভার এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট এবং ডেঙ্গু আরটি-পিসিআর টেস্ট।
♦ ডেঙ্গুর কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এবং সিম্পটমিটিক চিকিৎসার দিকেই বেশি মনোনিবেশ করা হয়।