ছোট্ট একটা মেথির দানার যে কী গুণ, তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না! মেথির স্বাদ খুব একটা ভাল নয়। তবে অনেক খাবারই আছে, যাতে সামান্য পরিমাণে মেথি পড়লে তার স্বাদ হয় অতুলনীয়। যদিও এই মেথির দানাই আপনার শরীর ও মনের জন্য অভাবনীয় কিছু কাজ করতে পারে। শুনে আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে! ছোট্ট একটা সোনালি রঙের বীজ (বোটানিক্যালি যার নাম ট্রিগোনেলা ফোনাম-গ্রেকাম) স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ক্ষেত্রে একটি পাওয়ার হাউস হিসেবে বিবেচিত হয়।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা উন্নত করা থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মতো অগুণতি কাজ করে থাকে একটা মেথির দানা। শুধু ঔষধি হিসেবে ব্যবহার কেন! নানাবিধ রান্নাতেও মূল উপাদান হল এই মেথি। বিভিন্ন রান্নায় সামান্য মেথির দানা দিলেই তা মিষ্টি এবং তিক্ত উভয় স্বাদই দিতে পারে। খাবারের সঙ্গে মিশে মেথি তার নিজস্ব ক্যারিশ্মা ছড়িয়ে দেয়। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের তরি-তরকারি থেকে শুরু করে সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের হরেক কিসিমের স্ট্যু, স্যুপ-সহ অন্যান্য রান্নাতেও মেথির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
মেথি পাতা: সুগন্ধি, সবুজ এবং স্বাস্থ্যকর
মেথি পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং হজমশক্তি বাড়াতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, এগুলি আয়রনের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে পারে। মেথির পাতা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। সালাদ, তরকারি থেকে শুরু করে ভেষজ চা পর্যন্ত, বিভিন্ন রকম ভাবে মেথি পাতা খেতে পারলে তা থেকে খুব ভাল এবং স্বাস্থ্যকর উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
আয়ুর্বেদ-সহ অন্যান্য বিভিন্ন ওষুধে দীর্ঘ দিন ধরে মেথির প্রয়োগ করা হচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞানও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অধ্যয়ন করে দেখেছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, মেথির মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রার দ্রবণীয় ফাইবার, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম। সেই সঙ্গে মেথির দানা আপনার অন্ত্রে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেটের শোষণ কম করতে পারে। তার ফলে রক্তে শর্করার বৃদ্ধি অনেকটাই কম হয় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতাও আগের থেকে উন্নত হয়। তাই, রোগমুক্ত থাকতে যদি একটি প্রাকৃতিক প্রতিকারের খোঁজ করেন, তাহলে মেথির থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না।
এক চামচ (11 গ্রাম) গোটা মেথির দানা
ক্যালোরি: 35 কিলোক্যালরি
ফাইবার: 6 গ্রাম
প্রোটিন: 3 গ্রাম
চর্বি: 3 গ্রাম
আয়রন: 1 গ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ়: DV (ডেইলি ভ্যালু) এর 6%
ম্যাগনেসিয়াম: DV (ডেইলি ভ্যালু) এর 5%
প্রদাহ বিরোধী ওষুধ
মেথির অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে যতটা গবেষণা করা গিয়েছে, তার প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে সেভাবে রিসার্চ করা হয়নি। তবুও জানা গিয়েছে, মেথির মধ্যে রয়েছে স্যাপোনিন্স এবং ফ্ল্যাভোনয়েডসের মতো যৌগ, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আর্থ্রাইটিস, হাঁপানি এবং অন্যান্য প্রদাহজনক সমস্যা রয়েছে যাঁদের, তাঁরা এই বহুমুখী ভেষজ বিভিন্ন ভাবে খেতে পারেন।
মায়েদের দুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত
একাধিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে,মেথিতে থাকা কিছু যৌগ স্তন্যপান করানো মায়েদের দুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত একটি হরমোন প্রোল্যাক্টিন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুধ উৎপাদন কাঙ্খিত মাত্রায় উদ্দীপিত হলে মেথি খাওয়া বন্ধ করা যেতে পারে।
একনজরে মেথির একাধিক গুণ
ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে – এক চামচ মেথি দানা শুকিয়ে, তারপরে তা গুঁড়ো করে টানা একমাস প্রতিদিন দু’বার করে গরম জলের সঙ্গে পান করুন। মাঝে 15 দিনের একটা বিরতি নিন। তারপরে পুনরায় এই চক্রটি আবার শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মাতৃদুগ্ধের উৎপাদন বাড়ায় – ভাত, মেথির দানা, নারকেলের দুধ এবং ঘি ব্যবহার করে ছোট্ট ছোট্ট গ্রাস করে খান। তাতে খুবই উপকার পাবেন।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ – এক কাপ জলে এক টেবিল চামচ মেথির দানা ফুটিয়ে তা দিয়ে চান তৈরি করুন। দিনে দু’বার করে তা খান, তাহলে তা আপনার বারংবার খিদে-খিদে ভাবকে বাগে আনতে পারবে।
গাঁটের ব্যথা এবং প্রদাহ – এক চামচ মেথি সারারাত এক কাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ওই মিশ্রণটি একটু গরম করে খালি পেটে খান। তাহলে দেখবেন, গাঁটের ব্যথা আগের থেকে অনেকটাই কম।
ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ – আঙুর এবং লবণের সঙ্গে যদি মেথির দানা খেতে পারেন, তাহলে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
চুল বড় করতে এবং কন্ডিশনিং – মেথি দানা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন এবং দইয়ের সঙ্গে তা গ্রিন্ড করে নিন। এই মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগালে তা প্রাকৃতিক হেয়ার কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে।
খুশকি মোকাবিলা – মেথি পাতা এবং ভিনিগার দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। শ্যাম্পু করার আগে তা আপনার চুলে লাগান, তাহলেই দেখবেন খুশকি অনেকটাই দূর হয়ে গিয়েছে।