ঝটপট ওজন কমাতে হাজার-একটা পন্থার শরণাপন্ন হন সাধারণ মানুষ। মেদ ঝরাতে কেউ ডায়েট চার্ট অক্ষরে-অক্ষরে পালন করেন, কেউ বা যোগা বা প্রাণায়াম করেন, কেউ আবার নিয়মিত জিমে গিয়ে ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজেকে রোগা ও ফিট রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো, ওজন কমাতে এত-শত কাজ না করে, এত ঝক্কির মধ্যে না গিয়ে, শুধুমাত্র যদি রান্নাঘরে থাকা মশলা বা আপনার চারপাশের ভেষজগুলি দিয়েই কাজ হয়ে যেত, কেমন হত তাহলে! জানলে খুশি হবেন, আপনার রান্নাঘরেই এমন অনেক কিছু আছে, যা আপনার বিপাক প্রক্রিয়াকে আরও ভাল করতে পারে এবং অতিরিক্ত ফ্যাটও অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বার্ন করতে পারে।
ওজন কমানোর বিষয়ে আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিভঙ্গী
আয়ুর্বেদ, অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতাকে ‘কাফা’ বা জলের উপাদান সঞ্চয় হিসেবে দেখে। আয়ুর্বেদ মনে করে, এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় একটি দুর্বল হজমের আগুন (আয়ুর্বেদের ভাষায়) এবং একটি অনিয়ন্ত্রিত মনের দ্বারা। তার ফলে শরীরে আমা (অসম্পূর্ণভাবে বিপাকীয় খাবার) তৈরি হয়।
এখন এই দুর্বল হজমের আগুন পরিচালনা এবং বিপাক ক্রিয়াকে আরও উন্নত করার জন্য আয়ুর্বেদ একটি স্বতন্ত্র পদ্ধতি প্রয়োগ করে। ফাস্টিং বা উপবাস থেরাপি এবং চর্বি বিপাক বাড়ানোর জন্য পাচক ভেষজ ব্যবহারের মতো কৌশলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে আয়ুর্বেদ। এছাড়াও শুকনো ঔষধযুক্ত পাউডার ম্যাসাজ়, এবং কিছু আয়ুর্বেদিক ডায়েটও প্রয়োগ করা হয়। তার পাশাপাশিই আবার স্থূলতা পরিচালনার জন্য আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা, শারীরিক ব্যায়াম এবং পিওরিফিকেশন থেরাপিতে যুক্ত থাকার পরামর্শ দেন।
কেরালার আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্বপ্না মাধবন বলছেন, “নানাবিধ হার্ব বা ভেষজ, হার্ব সাপ্লিমেন্ট এবং মশলা আপনার ওজন কমানোর প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তবে তার সঙ্গে অতি অবশ্যই ভাল পুষ্টি, ব্যায়াম এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারাও প্রয়োজন। গুগ্গুলু বা ভারতীয় গন্ধরস সম্ভবত চর্বি পোড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ভেষজ। এটি ক্কাথ, ট্যাবলেট এবং সাপ্লিমেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়।”
ওজন কমানোর জন্য ভেষজ
সাম্প্রতিকতম একাধিক গবেষণা বিজ্ঞানীদের চিরাচরিত একটা ধারণা থেকে একটু সরে এসে পুনরায় বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। সেই ধারণাটি হল, একজন ব্যক্তির ওজন কেবলমাত্রই খাওয়া এবং ব্যয় করা ক্যালোরির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার মধ্যে দিয়েই নির্ধারিত হয়। এখন নতুন গবেষণাগুলি থেকে জানা যাচ্ছে, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা, হজম প্রক্রিয়া, শরীরের বিপাকীয় ফাংশন এবং এন্ডোক্রিন কার্যকলাপের মতো কারণগুলিও ওজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখন কোন কোন ভেষজের মধ্যে সত্যিই স্থূলতার মতো মারাত্মক সমস্যার সমাধান করার মতো বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি হল মোরিঙ্গা বা সজনে গাছের পাতা, কালো মরিচ, গার্সিনিয়া, মুথা ঘাস বা নাটগ্রাস, আদা, আমলকি, সুইট ফ্ল্যাগ বা বচ (গাছে জন্মানো উদ্ভিদ বিশেষ), গোটা হলুদ, মেথি, গোল মরিচ এবং লম্বা মরিচ। ডাঃ মাধবন বলছেন, “এই ক্ষেত্রে গবেষণা উল্লেখযোগ্য ফলাফল নিয়ে হাজির হয়েছে।”
কিছু গবেষণা
স্থূলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে এই ঔষধিগুলির উপর কিছু গবেষণার পরে দেখা গিয়েছে, এদের মধ্যে মেথি, গোলমরিচ এবং সজনে গাছের পাতা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে, যে কারও ঘনঘন খাওয়ার অভ্যাস বন্ধ করা যেতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে, কালোমরিচ এবং লম্বা মরিচ বিপাক বাড়ায়। এমনকি, মধুতেও স্থূলতা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। স্থূলতা ব্যবস্থাপনায় মধুর ভূমিকার উপর একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা দেখায় যে জৈব মধু সম্ভাব্য ওজন কমাতে সাহায্য করে।
তবে যে কোনও হার্ব ও হার্ব সাপ্লিমেন্টগুলি গ্রহণ করে ফলাফল পেতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এই ঔষধিগুলির উপরে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, এরা প্রায় প্রত্যেকেই বিপাক প্রক্রিয়া আরও ভাল করতে পারে, ফ্যাট বার্ন করতে পারে, চর্বি শোষণকে হ্রাস করতে পারে এবং শরীরের চর্বি শতাংশ উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারে। অর্থাৎ এদের মধ্যে সবগুলিই শরীরের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে আমাদের ফিট রাখতে সাহায্য করে। তাই, আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা এই ভেষজগুলি বিভিন্ন আকারে খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিছু গুঁড়ো করে, কিছুর আবার রসের নির্যাস করে, চা করে এবং ক্বাথ বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।