
বিশেষজ্ঞরা বলেন যে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ডেঙ্গু সম্পর্কে আরও বেশি রকমের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং ডেঙ্গুর দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত না হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ডেঙ্গু বিশেষ করে তাদের কাছে মারাত্মক আকারে দেখা দিতে পারে যাদের শরীরের ওজন অতিরিক্ত, উচ্চ রক্তচাপ আছে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সাথে ডায়াবেটিস আছে। প্রদাহ ছাড়াও, ডেঙ্গুর কারণে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা প্রভাবিত হয়, ডেঙ্গু জ্বর ক্ষিদেকেও প্রভাবিত করতে পারে যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ওঠানামা করে এবং এটা যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে ফেলে।
“যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের সুগার লেভেল এবং প্লেটলেট কাউন্টের উপর নজর রাখা উচিত,” মুম্বাইয়ের এসএল রাহেজা হাসপাতালের সিনিয়র ডায়াবেটোলজিস্ট ডাঃ অনিল ভোরস্কর সতর্ক করেন। তিনি আরও বলেন যে যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং ইতিমধ্যে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির রোগের মতো শারিরীক সমস্যাগুলিকেও নির্ণয় করা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর এই জটিলতাগুলির দ্বারা বেশি করে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে।
ডায়াবেটিস ও ডেঙ্গু: ব্লাড সুগার কম হওয়ার মতো ঘটনাগুলি ঘটার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন
ডাঃ ভোরস্কর বলেন, হাই ফিভারের সময় রোগীর খাবার খাওয়ার পরিমাণ খুবই কম হয়ে থাকে এবং রোগী পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করে না যার ফলে দুর্বলতা দেখা দেয়। এর উপরে যদি তারা ওষুধ খেতে শুরু করে, বিশেষ করে খাওয়ার ওষুধ, তখন তাদের শরীরে হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দিতে পারে। “এটি একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি,” ডঃ ভোরস্কর সতর্ক করেন।
একটি কম্প্লিট ব্লাড কাউন্ট বা CBC টেস্ট শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা নির্ধারণে সহায়তা করে যা প্লেটলেটের সংখ্যা হ্রাস পেলে বৃদ্ধি পায়। যদি প্লেটলেটের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং ৫০,০০০-এর নিচে চলে যায়, তাহলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং প্লেটলেট ট্রান্সমিটারের সাথে IV ফ্লুইড দিতে হবে।
“যারা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তাদের সতর্ক থাকতে হয় এবং বিশেষ করে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে কারণ ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের তাদের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলিকে ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ডায়াবেটিস কি ডেঙ্গু জটিলতা বাড়াতে পারে?
ব্যাঙ্গালোরর মনিপাল হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ডায়াবেটোলজিস্ট-কনসালট্যান্ট, ডাঃ প্রমোদ ভি সত্য, ব্যাখ্যা করেন যে হেমোরেজিক ফিভার এবং শক সিন্ড্রোম উভয়ই ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় জটিলতা এমন যে কোনও ব্যক্তির জন্য যার প্লেটলেট সংখ্যা খুব কম।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হল এমন একটি সিন্ড্রোম যেখানে রক্তনালী বা রক্তজলিকা থেকে রক্ত শরীরে প্রবেশ করে এবং ফুসফুস, পাকস্থলী, গলব্লাডার, লিভারে জল জমা হয় এবং রক্তচাপ দারুনভাবে কমে যায় যাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে।
চিকিৎসার সময়কাল
ডেঙ্গুতে গুরুতরভাবে আক্রান্ত যে কোনও ব্যক্তিকে IV ফ্লুইড, প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন দেওয়া হয় যা এমন এক সাধারণ চিকিৎসা যা ব্লাড সুগারকে প্রভাবিত করে না। কিছু বিরল ক্ষেত্রে স্টেরয়েডও দেওয়া হয় যাতে প্লেটলেট বেড়ে যেতে পারে।
ডাঃ সত্য বলেন, অন্য যে কোনো সংক্রমণের মতোই ডেঙ্গু হওয়ার সাথে সাথে ব্লাড সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ যে কোনো সংক্রমণ বা প্রদাহ সাধারণত স্ট্রেস হরমোনকে বাড়ায় আর ব্লাড সুগারকে সামান্য পরিমাণে বাদায় কিন্তু ডায়াবেটিস সুগার লেভেলকে প্রভাবিত করে বা তার উল্টোটি নির্দেশ করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য ডেঙ্গু সতর্কতা
ডায়াবেটোলজিস্ট ডাঃ অশ্বিতা শ্রুতি দাস বলেন যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের রক্তপাতের ঝুঁকি বিবেচনা করে যে কোনও ধরণের ব্লাড থিনার বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ বন্ধ করা দরকার।
ডাঃ ভোরস্কর বলেন, জ্বরের সময় যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের দিনে তিন থেকে চারবার ব্লাড সুগারের পরিমাণ পরিমাপ করা উচিত এবং সেই অনুযায়ী ইনসুলিন নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ওষুধ খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো।
“অনেক সময়, এটা দুরূহ হয়ে যায় কারণ রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিহত হয়, তাই আপনার ওষুধ খাওয়া কমিয়ে দেওয়া ভাল এবং যদি শর্করা বেশি থাকে তবে রোগীকে ইনসুলিন দেওয়া ভাল কারণ ইনসুলিনের নমনীয়তা ট্যাবলেটের চেয়ে অনেক বেশি। ”
যদি রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যা ভীষণভাবে কমে গিয়ে থাকে, তবে তাঁর একাধিকবার রক্তক্ষরণ হতে পারে, GI ট্র্যাক্টে রক্তপাত হতে পারে এবং রক্তক্ষরণ ও ডিহাইড্রেশনের কারণে শকে চলে যেতে পারে।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে তরল পান করুন
নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ডেঙ্গু জ্বরের সাথে লড়াই করা লোকেদের নিজেদেরকে তরল পান করে হাইড্রেটেড রাখাই উত্তম। জ্বর কমাতে তাদের স্যালাইন নেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে, বিছানায় শুয়ে সারাদিন বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্যারাসিটামল খেতে হবে।
“ডিহাইড্রেশন এড়াতে মিষ্টি ছাড়া তাজা জুস, নারকেল জল বা লেবুর জল নুনের সাথে খাওয়া বাঞ্ছনীয়,” বলেন ডাঃ ভোরস্কর৷
যাদের ডায়াবেটিস আছে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদেরও মশার কামড় এড়াতে তাদের চারপাশ পরিষ্কার রাখার জন্য কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে যদি তাদের এলাকায় জল জমে থাকে এবং ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়।
সারসংক্ষেপ
- ডায়াবেটিস কমরবিডিটিস অর্থাৎ ডায়াবেটিস সহ শরীরের অসুস্থতা এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দিনে তিন থেকে চার বার তাদের শরীরে শর্করার মাত্রা নিরীক্ষণ করতে হবে।
- ব্লাড থিনার বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান এমন রোগীদের রক্তপাত হওয়ার এবং ডেঙ্গুর শক সিন্ড্রোমের ঝুঁকি এড়াতে ওষুধ বন্ধ করতে হবে যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে মারাত্মক হতে পারে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজেদের হাইড্রেটেড রাখতে হবে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে IV ফ্লুইড, প্লেটলেট ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হবে