ওজন কমানোর জন্য কঠিন কসরত করতে হয়। তবে নির্দিষ্ট ঋতুতে ওজন কমানোর জার্নি অনেকটাই সহজ হয়ে যায় এবং তাতে কাজও ভাল হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে গরমকালের কথা। বছরের এই সময় চরম তাপে বাড়ির বাইরের একাধিক ক্রিয়াকলাপ এবং খেলাধূলার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে আশ্চর্যজনক ভাবে ভাল ফল মিলতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই গরমকাল হল মেদ ঝরানোর জন্য আদর্শ একটা সময়।
গরমে ওজন কমানো কি সহজ?
গ্রীষ্মকাল শারীরিক ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকার জন্য সহায়ক। এই সময়ে সূর্যালোকের বর্ধিত এক্সপোজ়ারের কারণে মানুষজন স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার খান এবং সর্বক্ষণ নিজেদের হাইড্রেটেড রাখেন। শীতকালে মানুষ ক্ষুধার্ত বোধ করেন। কারণ, তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে আরও বেশি করে শক্তির প্রয়োজন হয়। আর এই অতিরিক্ত শক্তিই হজমের মাধ্যমে পাওয়া যায়, যা শরীরের তাপ তৈরি করতে সাহায্য করে। একে খাবারের থার্মোজেনিক প্রভাব বলা হয়।
ব্যাঙ্গালোরের নিরামাই ক্লিনিকের জেনারেল ফিজ়িশিয়ান এবং নিউট্রিশন কোচ ডাঃ আর নির্মলা বলছেন, “শীতকালে শরীরের প্রয়োজনীয় তাপ তৈরি করার জন্য ক্ষুধা কিছুটা বেড়ে যায়। সেই জায়গায় গ্রীষ্মকালে মানুষজন কম ক্ষুধার্ত বোধ করেন। কারণ, তাঁদের শরীর গরম থাকে। ফলে, তাপ উৎপন্ন করার জন্য অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন হয় না।”
তাছাড়া, গ্রীষ্মকাল সাঁতার বা হাইকিংয়ের মতো শারীরিক কার্যকলাপের জন্য আদর্শ। সূর্যালোকের এক্সপোজ়ার ভিটামিন ডি-এর সংশ্লেষণকে যথেষ্ট সহজ করে। বেসাল মেটাবলিক রেটও বৃদ্ধি পায়, যা আপনাকে আরও ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে। ডাঃ নির্মলা আরও যোগ করে বলছেন, “শীতকালে মেদ ঝরানোর কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায় কারণ মানুষ ব্যায়াম করতে চান না, হাঁটাহাঁটিও করতে চান না। বাইরে ঠান্ডার মধ্যে বেরিয়ে কসরত করার থেকে বাড়িতে কম্বলের ভিতরেই আরাম করা পছন্দ করেন তাঁরা।”
তবে গরমেও আপনি কতটা ক্যালোরি গ্রহণ করছেন এবং তা বার্ন করছেন, সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যে খাবার আপনি খেলেন, তা যদি শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার না করতে পারেন তাহলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে জমা হয়। তার ফলে ওজন বাড়তে পারে। সেই সঙ্গেই আবার আপনি যে ধরনের খাবার খান তার পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গরমে ওজন কমানোর কয়েকটি টিপস
ব্যাঙ্গালোরের নিউট্রিশনিস্ট অনিতা দেবরাজ আরাধ্য বলছেন, “আপনি যদি সত্যিই ওজন কমাতে চান, তাহলে বছরের যে কোনও সময়ই আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে।” তবে গরমে ওজন কমানোর কাজটা আরও সহজ করতে কয়েকটি কৌশলের কথা বলছেন এই নিউট্রিশনিস্ট।
* ক্যালোরি ট্র্যাক করুন: আপনার ক্যালোরির একটা রেকর্ড রাখুন। বেশি করে এবং ঘনঘন খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, গরমে খুব সহজেই খাবার হজম হয়ে যায় বলে আপনার মধ্যে বেশি করে খাওয়ার প্রবণতা এসে যায়। আরাধ্যা বলছেন, “যে কোনও ঋতু নির্বিশেষে ক্যালোরি ম্যানেজ করা ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই অনুশীলনের জন্য শৃঙ্খলা এবং অনুপ্রেরণা প্রয়োজন।”
* প্রতিদিন ব্যায়াম করুন: গরমে আপনাকে প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতে হবে। কেউ সকালে বা কেউ সন্ধ্যায় ব্যায়াম করতে পারেন। আপনার বাড়িতে বা জিমে যদি এয়ার কন্ডিশনার থাকে, তাহলে দুপুরে বা বিকেলেও ওয়ার্ক-আউট করতে পারেন।
* নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন: শরীরে পর্যাপ্ত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে, তা নিশ্চিত করার জন্য হাইড্রেশন গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মকালে আমাদের বেশি ঘাম হয়। তার ফলে প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট নষ্ট হয়ে যায়। আরাধ্যা বলছেন, “দুই লিটারের বেশি জল পান করুন এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলিও পূরণ করুন। এর ফলে ক্লান্তি এড়াতে পারবেন।”
* যথা সময়ে যথেষ্ট ঘুমান: ভুল সময়ে ঘুমানো এবং শোবার আগে সিনেমা বা সিরিজ় দেখা এক্কেবারেই উচিত নয়। ঘুমের জন্য একটা নির্দিষ্ট রুটিন মনে চলা জরুরি। পাশাপাশিই আবার দরকার পর্যাপ্ত ঘুমেরও। মনে রাখবেন, সঠিক ঘুম ওজন কমাতে সাহায্য করে।
* বেশি করে ফল খান: তরমুজের মতো মরশুমী ফল খাওয়াও আবশ্যিক। তরমুজে যেহেতু জিআই বেশি, তাই তার ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ এবং কতটা পরিমাণে তা খাচ্ছেন তার অংশ নিয়ন্ত্রণও গুরুত্বপূর্ণ।
আরাধ্যা বলছেন, “ওজন কমাতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাটাও জরুরি।” তাঁর কথায়, “চিনিযুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে তাজা ফলের রস বেছে নেওয়া উচিত। তবে টাটকা ফল খাওয়া আরও ভাল। ঠান্ডা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, তা হজমে বাধা দেয়। জিরা জল এবং বাটার মিল্কের মতো পানীয় বেছে নিন, যা কুল্যান্ট হিসেবে কাজ করে।”
মোদ্দাকথা
* গরমে মানুষজন শারীরিক ক্রিয়াকলাপে অংশ নিতে ইচ্ছুক হন এবং নিজেকে হাইড্রেটেড ও স্বাস্থ্যকর রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার, পানীয় পান করেন।
* গ্রীষ্মে আপনার খিদে কম পায়। কারণ, শরীর গরম থাকে এবং তাপ উৎপন্ন করার জন্য অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন হয় না।
* ওজন কমানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, ক্যালোরি খরচ-সহ অন্যান্য আরও কারণ যেমন হাইড্রেশন, ব্যায়াম এবং জীবনধারা পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে।