আপনার সন্তানের সাথে এটি করে দেখুন: পায়ের আঙ্গুলগুলি সামনের দিকে নির্দেশ করে এবং গোড়ালিদুটিকে একে অপরের সাথে স্পর্শ করিয়ে তাকে সোজা করে দাঁড় করান। দেখুন তার হাঁটু জোড়া আছে কি না, নাকি আলাদা। যদি হাঁটুগুলি একে অপরকে স্পর্শ না করে তাহলে আপনার সন্তানের ধনুকাকার পা থাকতে পারে। “বাচ্চাদের মধ্যে ধনুকাকার পা [বা জেনু ভারুম] হল এমন একটি রোগাবস্থা যেখানে একটি শিশুর পা হাঁটু থেকে বাইরের দিকে বাঁকে যায়,” বলেছেন ডাঃ কবিতা ভাট, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রিনোলজি, অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতাল, বেঙ্গালুরু৷ “শিশু এবং বাচ্চাদের মধ্যে ধনুকাকার পা হওয়া এক সাধারণ ঘটনা। এটি তাদের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ।” তাই বলাই বাহুল্য, শিশুদের মধ্যে ধনুকাকার পা থাকার ঘটনা কিন্তু বিচ্ছিন্ন বা বিরল নয় তবে জরুরি কিছু তথ্য অবশ্যই জানা প্রয়োজন।
চার বছর বয়সী ইনসিয়ার এই রোগাবস্থাটি ছিল, তবে তার পরিবার প্রথমে এটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। সে অন্য বাচ্চাদের মতো দৌড়াতে চাইত না। হাঁটতে বা দৌড়াতে বাধ্য করা হলে সে কাঁদত এবং চলাফেরা করতে বাধা দিত। তখনই তার বাবা-মা অবশেষে বুঝতে পেরেছিলেন যে কিছু একটি ঠিক নেই।
“আমরা তাকে চকোলেট দিয়ে মন ভোলানো থেকে তার প্রিয় খেলনা নিয়ে আশেপাশে ঘুরে বেরানো পর্যন্ত সবকিছুই চেষ্টা করেছি, কিন্তু এটি স্পষ্ট হয়ে গয়েছিল যে সে চলাফেরা করতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত না,” বলেছেন তার বাবা, নুরুদ্দিন চাল্লাওয়ালা, গুজরাটের ভাদোদরার একজন ব্যবসায়ী।
তাঁরা যে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করেছিলেন তিনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন যে ইনসিয়ার পা ধনুকাকার ছিল এবং তার চলাফেরার বিরোধিতা করা ছিল সম্ভবত তার বেঁকা হাড়ের কারণে অনুভব করা ব্যথার কারণে।
মুম্বাইয়ের এসএল রাহেজা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ সিদ্ধার্থ শাহ বলেছেন যে বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই দুই থেকে তিন বছর বয়সে পা আবার সোজা হয়ে যায়। যদি এই বয়সের পরে অবস্থাটি চলে না যায় তাহলে সমস্যাটি ঠিক করার প্রয়োজন হতে পারে।
শিশুদের ধনুকাকার পা (বোলেগ) হওয়ার কারণ?
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের ধনুকাকার পা হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। বিস্তারিত ইতিহাস সহ শুধুমাত্র একটি গভীর শারীরিক পরীক্ষাই কারণটি নির্ধারণ করতে পারে।
ডাঃ ভাটের মতে, সমস্ত শিশুর গর্ভে অবস্থানের কারণে জন্মের সময় তাদের পায়ের আকারে সামান্য পার্থক্য দেখা যায়।
“এই শারীরবৃত্তীয় নমন তিন বছর বয়স পর্যন্ত থাকে,” তিনি বলেছেন৷ “এটি শিশুর হাঁটা, দৌড়, আরোহণ এবং খেলার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে না। যদি কোনও শিশুর অবস্থা একটু বড় হওয়ার পরে চলে না যায় তাহলে এটি একটি বৃদ্ধি বা হাড়ের ব্যাধির লক্ষণ হতে পারে।”
ইনসিয়ার ক্ষেত্রে, তদন্তে জানা গেছে যে তার ভিটামিন ডি-এর অভাব ছিল। তারপর তাকে পরিপূরকগুলি দেওয়া হয়েছিল। দুই মাসের মধ্যে, সে তার চলাফেরায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখায় এবং তার পায়ের বক্রতা কমে যায়।
ডাঃ শাহ বলেছেন যে রিকেটস, ভিটামিন ডি এর অভাব, হল শিশুদের মধ্যে ধনুকাকার পায়ের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। “এটি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণকে প্রভাবিত করে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য এবং হাড়ের বিকাশকে বাধা দেয়,” তিনি বলেছেন।
ডাঃ ভাটের মতে “শিশুর বয়স ছাড়াও, শারীরবৃত্তীয় বক্রতা এবং রিকেটের মধ্যে পার্থক্য হল যে রিকেটের সাথে দাঁতের বিকৃতি, পেশীর দৃঢ়তা হ্রাস, বিলম্বিত মাইলস্টোন এবং শরীরের অন্যান্য অংশে হাড়ের বিকৃতির মতো অন্যান্য উপসর্গগুলি রয়েছে।”
তিনি বলেছেন যে শিশুদের মধ্যে ধনুকাকার পায়ের অন্যান্য কারণগুলি হল:
- ব্লান্টস রোগ: মোটা শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং অত্যধিক ওজনের কারণে হাঁটুর চারপাশে বৃদ্ধির প্লেটগুলি প্রভাবিত হয়।
- লিগামেন্টের শিথিলতা: শিথিল লিগামেন্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন এমন ব্যক্তির পা হাঁটার সময় বাইরের দিকে বাঁকানো বলে মনেহয়।
- কঙ্কাল ডিসপ্লাসিয়া: এমন একটি অবস্থা যা হাড় এবং তরুণাস্থির বিকাশকে প্রভাবিত করে এবং বেঁটে লোকেদের ক্ষেত্রে ধনুকাকার পা হিসাবে দেখা যায়।
ফুটবল এবং ধনুকাকার পা
উত্তর আমেরিকার 1,344 জন ফুটবল খেলোয়াড় এবং 1,277 জন নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তির উপর পরিচালিত 2018 সালের তিনটি অধ্যয়নের মেটা-বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বৃদ্ধির বছরগুলিতে অত্যধিক বেশি ফুটবল খেলার ফলেও ধনুকাকার পা হতে পারে এবং ফলস্বরূপ, হাঁটুর বাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যাইহোক, পা বেঁকে যাওয়া কেবলমাত্র সেই সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায় যাঁরা অত্যধিক বেশি ফুটবল খেলেন, যাঁরা শখ হিসাবে ফুটবল খেলেন তাঁদের মধ্যে নয়।
ধনুকাকার পা সংশোধন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ডাঃ শাহের মতে, অন্যান্য সমস্যাগুলি এড়াতে কম বয়সে সমস্যাটিকে সনাক্ত করে ঠিক করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। “এমন সম্ভাবনা থেকে যায় যে বক্রতা [পায়ের] শিশুর দৈনন্দিন কাজকর্মকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না করলে কখনও কখনও তা উপেক্ষিত হতে পারে,” তিনি বলেছেন।
ইনশিয়ার বাবা সম্মতি জানান। তিনি বলেছেন যদি তাঁর মেয়ে চলাফেরায় বিরোধ না দেখাত তাহলে তাঁরা সম্ভবত তার পা বেঁকে যাওয়া লক্ষ্য করতে পারতেন না। এখন, ইনসিয়াহ আর চলাফেরা করতে বাধা দেয় না এবং ভালভাবে হাঁটতে ও দৌড়াতে পারে।
ডাঃ শাহ বলেছেন যে শৈশবে যদি এই অবস্থাটির চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তা প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে, যেক্ষেত্রে খেলাধুলার মতো কঠিন কার্যকলাপের সময় শরীরের বায়োমেকানিক্স প্রভাবিত হতে পারে। “বেঁকে যাওয়ার কারণে, হাঁটুর গাঁঠগুলিতে ওজন সমানভাবে বিতরণ হয় না এবং হাঁটুর ভিতরের অংশে বেশি চাপ পড়ে,” তিনি বলেছেন। “এটির ফলে যথাসময়ের পূর্বে হাঁটুতে বাত, পিঠে ও পায়ে ব্যথা এবং হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে।”
শিশুদের মধ্যে ধনুকাকার পা এর চিকিৎসা করা
ডক্টর ভাটের মতে, শিশুদের মধ্যে ধনুকাকার পা এর চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল, একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক সার্জন দ্বারা রোগাবস্থাটির মূল্যায়ন। “একবার সঠিক কারণ শনাক্ত হয়ে গেলে শিশুদের ক্ষেত্রে সংশোধন করা সহজ হয়ে যায় কারণ তাদের হাড়গুলিকে নতুন আকার দেওয়া যেতে পারে,” তিনি বলেছেন। “কঙ্কালের ডিসপ্লাসিয়ার জন্য বেশি চিকিৎসা নেই, তবে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দিয়ে রিকেট রোগ ঠিক করা যেতে পারে।” তিনি আরও বলেছেন যে যদি অবস্থা গুরুতর এবং স্থায়ী হয় তাহলে সংশোধনমূলক অস্ত্রোপচারও সাহায্য করতে পারে।
ডাঃ শাহ বলেছেন যে ধনুর্বন্ধনী (ব্রেশেস), যা স্প্লিন্ট বা পায়ে পরা যায় এমন একটি বেল্টের মতো, প্রাথমিক পর্যায়ে ব্লান্ট রোগে ধনুকাকার পা ঠিক করতে সহায়তা করে।
সংশোধনমূলক অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে ডাঃ শাহ বলেছেন যে বেঁকে যাওয়া হাড় ভেঙে সোজা করা হয়। একবার হাড়গুলিকে একটি নতুন সমতায় সাজানো হয়ে গেলে ঠিক না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্লেট এবং স্ক্রু দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ধরে রাখা হয়।
সারাংশ: পিতামাতার জন্য দ্রষ্টব্য
ড. শাহ পিতামাতাদের সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। যদি তাঁদের সন্তান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে, হাঁটতে অস্বস্তি বোধ করে, ধনুকাকার পা আছে বলে মনে হয় বা হাঁটু বা নিতম্বে ব্যথার অভিযোগ করে তাহলে তাঁদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তবে তিনি অভিভাবকদের এটিরও পরামর্শ দেন যে তাঁদের সন্তানের বয়স তিন বছর না হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান এবং প্রকৃতিকে আগে তার উপায় বের করে নিতে দিন।