রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA)-এর সঙ্গে বসবাস করতে হয় যাঁদের, প্রদাহ, ব্যথা এবং জয়েন্টের অস্বস্তি তাঁদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এই ধরনের সঙ্কটজনক পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন পন্থা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল পুষ্টিকর খাদ্য। আর সেই পুষ্টিকর খাবারের কথা বলতে গেলে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের জন্য অপরিহার্য একটি আইটেম হল ডিম। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ডিম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,গবেষণায় প্রমাণিত ডিমের মধ্যে এমনই বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট প্রদাহকে উপশম করতে সাহায্য করে। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে যে, ডিমে উপস্থিত ফসফোলিপিডস, কোলেস্টেরল, লুটেইন এবং জেক্সানথিনের মতো বায়োঅ্যাকটিভ উপাদানগুলিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার প্যাথোফিজিওলজিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
মুম্বইয়ের কল্যাণের ফর্টিস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট রিউমাটোলজিস্ট ডাঃ হরমন সিং বলছেন, “ডিম হল পুষ্টির সঠিক রূপ। এটি যে কেবলই ভিটামিন এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ তা নয়। তার পাশাপাশিই আবার ভাল এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গেই জলের পরিমাণও রয়েছে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “ডিমে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য। এখন অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার ফলে ডিম, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত মানুষজনের মধ্যে উপস্থিত র্যাডিক্যাল অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।”
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে জয়েন্টের ক্ষয় হলে পেশি থেকে সাপোর্ট অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সেই পেশি শক্তিশালী করার জন্য শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিনেরও প্রয়োজন। ডাঃ সিং বলছেন, “ডিম, প্রোটিনের একটি ভাল উৎস হওয়ায় শরীরে খুব ভাল করে শোষিত হয়। অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও ডিম খুবই ভাল।” তিনি আরও যোগ করে বলছেন, “তবে, ডিম কিন্তু এক্কেবারেই কাঁচা খাওয়া উচিত নয়। ডিম সেদ্ধ করে খাওয়াই সবচেয়ে ভাল। কারণ, প্রোটিনের অভ্যন্তরে থাকা রাসায়নিক বন্ধনগুলো ডিন্যাচুরালাইজড হয়ে যায়, যা সহজে হজম হতে সাহায্য করে। অমলেট বা তরকারির ক্ষেত্রে ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়।”
ডিমের কুসুম কি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস মোকাবিলা করার জন্য উপকারী?
বাজারে একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, ডিমের কুসুম এড়িয়ে যাওয়া উচিত কারণ তাতে কোলেস্টেরল থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডিমের কুসুম হল, ভিটামিন ডি-এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস পরিচালনা করতে সাহায্য করে। সূর্যের আলো থেকে যে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, তাতে জয়েন্টের ব্যথা-সহ অন্যান্য উপসর্গগুলি আরও খারাপ হতে পারে। ডাঃ সিং বলছেন, “ডিমের কুসুমে ভিটামিন A, D, E, K, B1, B5, B6 এবং B9 এর মতো পুষ্টি রয়েছে।” সঙ্গে তিনি আরও যোগ করে বলছেন, “এতে কোলিনও রয়েছে, যা নিউরোট্রান্সমিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি স্নায়ুর পুনর্জন্ম এবং হাড়ের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ডিমের তুলনায় বেশি পরিমাণে কোলিন থাকে আর যে সব খাবারে, তার মধ্যে অন্যতম হল গরুর মাংস।” তবে, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ বা কার্ডিওভাসকুলার সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, তাঁদের পরিমিত পরিমাণে ডিম খাওয়া উচিত।
ডিম ও আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে ভুল ধারণা
অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা তাজ করে যে, ডিমের প্রোটিন উপাদান আর্থ্রাইটিসের উপসর্গ বৃদ্ধির কারণ। ডাঃ সিং বলছেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে যে, ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন উপাদান আর্থ্রাইটিসকে আরও খারাপ করে তোলে। কিন্তু মানুষজন এটা বুঝতে ভুল করেন যে, ডিমের প্রোটিন এমন নয় যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়। বরং, এটি একটি ভাল প্রোটিন। তার ফলে গেঁটে বাত রয়েছে যে সব মানুষজনের, তাঁরাও ডিম খেতে পারেন। আমাদের প্রতিদিনের খাওয়ায় সে ভাবে প্রোটিন থাকে না। সেই কারণেই ডিম নিয়মিত আমাদের ডায়েটের অংশ উচিত।”
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ডায়েট
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় দরকার তাজা শাকসবজি, ফল এবং প্রোটিনের ভালো উৎস যেমন ডিম, পনির, মাছ। এছাড়াও একজনকে অবশ্যই গমের পরিবর্তে বাজরা, জোয়ার এবং রাগির মতো গোটা শস্য বেছে নিতে হবে। এছাড়াও ময়দা, চিনি এবং রিফাইনড্ ও প্রসেসড্ খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে।
মোদ্দাকথা
* আর্থ্রাইটিস পরিচালনার জন্য ডিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি-এর মতো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি এতে রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য যা জয়েন্টের প্রদাহ এবং ব্যথা প্রতিরোধ করে।
* ডিমের কুসুমে কোলিনও থাকে, যা স্নায়ু ও হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
* ডিমে উপস্থিত প্রোটিন ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায় না। এটি একটি ভাল প্রোটিন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং গেঁটে বাত বা অন্য যে কোনও ধরনের আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এটি গ্রহণ করতে পারেন।