মহিলারা সারাদিন ঘরের বা অফিসের কাজ করতে গিয়ে পিরিয়ড ক্র্যাম্প বা পিরিয়ডের ব্যথা উপেক্ষা করেন। একটা আশা থেকেই তাঁরা এমনটা করে থাকেন, রাতে বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার সময় এই ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবেন, পিরিয়ডের ব্যথা যতই উপেক্ষা করবেন, ততই তা বাড়বে। তাতে আরও বিরক্তি বাড়বে এবং ঠিক করে ঘুমও হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিরিয়ড ক্র্যাম্প রাতের দিকে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে তাঁরা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায়ের সন্ধান দিয়েছেন।
রাতে পিরিয়ডের ব্যথা বাড়ার কারণ
রাতে পিরিয়ড ক্র্যাম্পের প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি হল, ঘুমের সময় আপনার অবস্থান অর্থাৎ যে পজিশনে আপনি ঘুমান। আপনি যখন শুয়ে থাকেন, তখন জরায়ুতে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। তার ফলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন।
ব্যাঙ্গালোরের অ্যাস্টার আরভি হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যার পরামর্শদাতা ডাঃ স্মৃতি নায়ক বলছেন, “ঘুমের সময় এন্ডোরফিনের মতো আপনার শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারীর পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকখানিই বেড়ে যায়।”
হরমোনের মাত্রার ওঠানামা, বিশেষ করে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন জরায়ু সংকোচন ঘটাতে পারে, যার ফলে রাতে পিরিয়ড ক্র্যাম্প হয়। এই হরমোনের পরিবর্তন রাতে বেশি হতে পারে। সেই কারণেই রাতে ঘুমের সময় শরীরের ব্যথার সহনশীলতাও হ্রাস পেতে পারে এবং আপনি পিরিয়ড ক্র্যাম্প আরও তীব্র ভাবে অনুভব করেন।
নয়াদিল্লির ড্যাফোডিলস বাই আর্টেমিসের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ পরামর্শদাতা ডাঃ অপূর্ব গুপ্তা বলছেন, “কিছু নির্দিষ্ট ঘুমের অবস্থান পেটে বা পিঠের নিচের দিকে চাপ দিয়ে ক্র্যাম্প বাড়াতে পারে, যার ফলে অস্বস্তি বেড়ে যায়।”
সেই সঙ্গেই আবার ঘুম ঠিক করে না হলে বা অনিদ্রা থেকে স্ট্রেসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা রাতে পিরিয়ডের ব্যথাকে আরও খারাপ করে তোলে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিহাইড্রেশনও পিরিয়ড ক্র্যাম্পের অন্যতম কারণ হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের সঙ্গে মাসিক সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ফলে পেশির ক্র্যাম্পও হতে পারে। ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা উচ্চ-সোডিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া জলধারণ এবং ফোলাভাবকে বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে ক্র্যাম্প আরও খারাপতর হয়।
স্ট্রেস এবং দুশ্চিন্তার মতো মানসিক অবস্থাগুলি একাধিক শারীরিক উপসর্গগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যার মধ্যে পিরিয়ড ক্র্যাম্পও রয়েছে। রাতে আপনার শরীর যখন বিশ্রামের অবস্থায় থাকে, তখন পিরিয়ডের ব্যথা আরও লক্ষণীয় হয়ে যায়।
রাতে পিরিয়ড ক্র্যাম্প দূর করার উপায়
সত্যি কথা বলতে গেলে কী, রাতে পিরিয়ড ক্র্যাম্প কমানোর তেমন কোনও উপায় নেই। শর্টকাট উপায়তো এক্কেবারেই নেই বললে চলে। তবে সামান্য স্বস্তি বোধ করতে দরকার জীবনধারা পরিবর্তন, ঘরোয়া প্রতিকার এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার হস্তক্ষেপ।
একটি হিটিং প্যাড ব্যবহার করা বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে উষ্ণ জলে স্নান করলে পেশি শিথিল হতে পারে এবং কিছুটা ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ব্যথা উপশমকারী অর্থাৎ পাতি কথায় ব্যথা কমানোর কিছু ওষুধ আপনাকে আরাম দিতে পারে।
ডাঃ নায়ক বলছেন, “নরম বালিশ ও কম্বল ব্যবহার করা এবং একটি আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে অস্বস্তি থেকে একটু রেহাই মিলতে পারে। পাশাপাশি রাতের বিশ্রামটাও ভাল হতে পারে।”
যেমন হাঁটা, সাঁতার বা যোগব্যায়ামের মতো নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ রক্তপ্রবাহ উন্নত করতে পারে এবং পিরিয়ড ক্র্যাম্পের তীব্রতা কমাতে পারে।
ডাঃ গুপ্তা বলছেন, “এগুলির পাশাপাশি ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য খাওয়া ও চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ও উচ্চ-সোডিয়ামযুক্ত খাবার এড়াতে পারলেই মাসিকের ব্যাথার সঙ্গে সম্পর্কিত ফোলা ভাব এবং প্রদাহ কমানো যেতে পারে।”
সারাদিন প্রচুর জল খেলে তা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে যা ক্র্যাম্পের ব্যথা অনেকটাই কমাতে পারে। তার পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মতো অনুশীলন, ধ্যানের মতো একাগ্রতা বাড়ানোর অভ্যাস করতে পারলে পিরিয়ড ক্র্যাম্প সহজেই পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
“কিছু লোক ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন বি 6 এর মতো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে পিরিয়ড ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পান। যদিও কোনও নতুন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, ” যোগ করলেন ডাঃ গুপ্তা।
পরিস্থিতি যদি একান্তই গুরুতর হয়, তাহলে একজন ডাক্তার হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মাসিকের ক্র্যাম্পের তীব্রতা কমাতে ওষুধ দিতে পারেন।
পিরিয়ডের ব্যথা এড়াতে ঘুমের পজিশন
“যদিও এর কোনও সহজ উত্তর বা সমাধান নেই। তবে কিছু অবস্থান কিছু মানুষের জন্য রাতে পিরিয়ডের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে,” ডাঃ নায়ক বলেছেন। পিরিয়ড ক্র্যাম্প কম হতে পারে, এমন দুটি ঘুমের পজিশনের পরামর্শ দিচ্ছেন ডাঃ নায়ক।
ভ্রূণের অবস্থান: ফেটাল পজিশন বা ভ্রূণের অবস্থানে আপনার হাঁটু বুকের দিকে টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে থাকুন। এই অবস্থানটি পেট এবং পিঠের নিচের দিকে চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হাঁটুর নিচে একটি বালিশ দিয়ে শুয়ে থাকুন: আপনার পিঠের উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকুন এবং আপনার হাঁটুর নীচে একটি বালিশ রাখুন যাতে সেগুলি কিছুটা উঁচু হয়। এই অবস্থানটি নিচের পিঠের ব্যথা উপশম করতে এবং শ্রোণী অঞ্চলে রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে সাহায্য করে।
মোদ্দাকথা
* ঘুমের সময় শরীর শিথিল এবং নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে, যার ফলে পিরিয়ড ক্র্যাম্প আরও বাড়তে পারে।
* দিনভর জমে থাকা স্ট্রেস এবং টেনশন রাতে পিরিয়ড ক্র্যাম্পকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
* হিটিং প্যাড ব্যবহার করে পেটে তাপ প্রয়োগ করা বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে উষ্ণ জলে স্নান করা পেশি শিথিল করতে এবং ক্র্যাম্পগুলিকে সহজ করতে সাহায্য করতে পারে।