এই গল্প বৃদ্ধ বয়সেও সচল থাকার গল্প । সময় নদীর স্রোতের মত বহমান । বয়স বেড়ে চলা জীবনের অঙ্গ । বয়স হলে প্রায়শই দুর্বলতা, ক্লান্তি ও গতিহীনতা গ্রাস করে । কিন্তু যখন আমরা দেখি, ২০–৩০ বছরের যুবকের চেয়ে ৭০ বছরের বডিবিল্ডার বা ক্রীড়াবিদ অনেক বেশী স্বাস্থ্যবান, তখন প্রশ্ন জাগে – আমরা যতটা অনুভব করি, বয়সকালে শারীরবিধি ততটাই কি পালন করি ?
কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে বা ছাত্রজীবনের শেষে আমরা যদি গতিহীনতা ও তা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে সচেতন থাকি, তাহলে দীর্ঘ ও উন্নত জীবন অমাদের আয়ত্তে থাকবে ।
কীভাবে হ্রাস পায় গতিশীলতা? কোলাজেন-এর ভূমিকা
৭০ বা ৮০ বছরের বয়স্করা অনেকেই অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওআর্থারাইটিস বা নিউরোমাসকুলার ব্যাধিতে ভোগেন যা ভীষণভাবে তাদের চলাফেরাকে ব্যাহত করে । এগুলো থেকে বাঁচার উপায় কিন্তু একটাই – বয়সজনিত অসুখের যা ওষুধ – শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ।
চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, যথেষ্ট শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বয়সকালে চলাফেরার সমস্যা কমায় । নিশ্চিতভাবে এটা বলা না গেলেও এটুকু নিশ্চিত যে সমস্যা এলেও তাকে পরাস্ত করার ক্ষমতা বাড়ায় ।
সাধারণ বয়সজনিত চলমানতা হ্রাস কোলাজেন-এর ভঙ্গুরতার কারণে ঘটে – যে ব্যবস্থা জল ধারণ করে এবং আমাদের অস্থিসংযোগস্থল সরস এবং নমনীয় রাখে । তাই কোলাজেন-এর ক্ষয় মানে হাড়ের জোড়গুলোর ক্ষয় ক্ষয় যার ফলে আগের মত সহজে তাদের পরিপূর্ণ চলমান না থাকা । স্থিত অবস্থায় থাকা জীবনধারা অর্থাৎ শারীরিক ক্রিয়াকলাপ না থাকা এই হারকে বাড়িয়ে দিয়ে অবস্থার ক্রম অবনতি ঘটায় ।
বেঙ্গালুরু অ্যাপেলো হাসপাতালের বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষেশজ্ঞ ডাঃ স্টিভ পল মানজালির মতে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মেই একটা ক্ষয় হয়, আগের মত অস্থিজোড় কাজ করে না, ফলত : এটা একটা অশুভ চক্র হয়ে দাঁড়ায় – বয়স্করা হাড় এবং জোড় দুর্বল হওয়ার জন্য নড়াচড়ায় কষ্ট পান – তাঁরা কম সচল থাকা পছন্দ করেন – যেটা আবার এই জায়গাগুলোকে আরও দুর্বল করে দেয় ।
তাই গতিহীনতা পরিবর্তিত শরীর ও জীবনধারার ওপর নির্ভর করে আর প্রাথমিকভাবে এটাই বলা যায় যে বয়সকালে চলাফেরার অসুবিধের প্রধান কারণ শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কমে যাওয়া ।
কীভাবে বয়সকালে গতিশীলতা বজায় রাখা যায়
শুনতে বাস্তবিক নাও মনে হতে পারে, তবু এটা একটা সুন্দর কথা ‘তুমি ততটাই বৃদ্ধ যতটা তুমি নিজেকে মনে করো’ । শরীর সুঠাম ও সুস্থ রাখা অনেক বয়স্ক ক্রীড়াবিদ জানিয়েছেন – ৬০/৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁরা তাঁদের শারীরিক কার্যকলাপ কমাননি । অনেকেই চেয়ে থাকেন, একটা বয়সের পর শান্ত পরিশ্রমহীন জীবনযাপন করাই শ্রেয় । তবু তাঁরা খেলাধুলার প্রতি, শরীর সতেজ সমর্থ রাখার প্রতি উৎসাহ বজায় রেখেছেন ।
এইচ. রামাপ্পা নামে শিবামগ্গার এক কৃষক ‘হ্যাপিয়েস্ট হেলথ’-এর সঙ্গে এক কথোপকথনে শরীর গঠনে তাঁর আগ্রহ এবং ৭০ বছর বয়সেও তা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন । তাঁর স্বাস্থ্যের কোনওঁ সমস্যা নেই, তিনি ব্যাধিকে দূরে রেখেছেন এবং যথেষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছেন । প্রতিদিন এক ঘন্টা শরীর চর্চা করা তাঁর জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে।
তিনি বলেছেন – বেশিরভাগ মানুষ একটা বয়সের পর শরীরচর্চার প্রতি আগ্রহ ত্যাগ করেন কিন্তু তিনি শরীর সতেজ ও সক্ষম রাখার উৎসাহ তাঁর আরো বেড়েছে । আমার শরীর গঠনের প্রতি একাগ্রতার প্রশংসা করেন মানুষ, আমি তাতে গর্বিত হই । আমি সবাইকে, বিশেষ করে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে চাই তাদের জীবনধারা বদলাতে । আমি এই বয়সেও যদি পারি, তারা নিশ্চই তাই পারবে । তারা যদি সক্রিয় না থাকে, বয়সকালে তাদের শরীরের সচলতা নিয়ে সমস্যা হবে । অল্প বয়স থেকে ব্যায়াম ও শরীরচর্চা তাদের সুস্থ রাখবে এবং বয়সজনিত অসুখ তাদের আক্রমণ করতে পারবে না কোনোদিন ।
বর্ষিয়ান নাগরিকদের প্রতি রামাপ্পার উপদেশ – যে কোনও সময়েই শরীরচর্চা শুরু করা যায় । প্রথমে একটু একটু আরম্ভ করলেও সুস্থ ও স্বাবলম্বী হতে তা সাহায্য করবে । বয়স কেবলমাত্র একটি সংখ্যা এবং ৬০ বছর বয়সেও যে কেউ প্রথমবার শরীরচর্চা শুরু করতে পারেন । তবে তাঁদের একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে – তিনি জানিয়েছেন ।
সুস্থ থাকার এই সফরে কয়েকটি পরামর্শ
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন । হাঁটুর জন্যে হাঁটা খুবই উপযোগী, খেয়াল রাখতে হবে হাঁটার জন্য হাড়ের সংযোগে যেন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে ।
- যদি এক চেয়ারে অনেকক্ষণ বসে কাজ করতে হয়, তাহলে বসার অবস্থান ও ভঙ্গী যেন ঠিক থাকে । মাঝে মাঝে একটু বিরতি দিয়ে পা ছড়ানো জরুরী ।
- যেখানে সিঁড়ি রয়েছে, সেখানে সিঁড়ি ব্যবহার করুন ।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, আগে শনাক্তকরণ মানেই আগে সমাধান।
- খেলাধুলা বা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকলে সেটা বজায় রাখুন ।
আসলে যা আপনাকে সুখী করবে, সুস্থ করবে, তাকে ছাড়বেন কেন ? শরীর ও মন জীবনকে রঙিন করে, উজ্জ্বল করে । সত্যিই নিজেকে আপনি যা মনে করবেন, সেটাই আপনার বয়স ।