একজনের উচ্চতা অনেকটা ওজনেরই মতো, শুধুই সংখ্যা মাত্র। কিন্তু সত্যিই কি তাই? শারীরিক এই প্যারামিটার পরিমাপ করা যায় ঠিকই। কিন্তু তা দিয়ে আর মানুষের মন ভরে না! এই ধরুন, যাঁর উচ্চতা খুবই কম। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি কিছুটা মনোকষ্টে ভোগেন! সকলের সামনে দাঁড়াতে খানিক লজ্জাও বোধ করেন। তাই, হাজার-একটা উপায় হাতড়ে বেড়ান, যাতে একটু লম্বা হওয়া যায়।
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, লম্বা হওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। অনেক খেলাধূলা এবং ক্রিয়াকলাপ রয়েছে, যেখানে উচ্চতা বিশেষ সুবিধা দেয়। এমনকি, অনেকে উচ্চতাকে আকর্ষণীয় এবং স্বাস্থ্যকর স্বভাব এবং জেনেটিক্সের লক্ষণ বলে মনে করেন। তবে মেরুদণ্ডের সংকোচনের কারণে এটি বয়সের সঙ্গে কমতেও পারে।
যাঁরা খানিকটা বেঁটে, তাঁরা এমন সব উপায়ের সন্ধান করতে থাকেন, যা তাঁদের উচ্চতায় কয়েক সেন্টিমিটার যোগ করতে পারে। অনেকে আবার লম্বা হতে ব্যায়ামও করে থাকেন। কিন্তু সত্যিই কি ব্যায়াম করলে আপনার উচ্চতা বাড়ার কোনও সম্ভাবনা রয়েছে?
যে বিষয়গুলি উচ্চতা নির্ধারণ করে
একজন ব্যক্তির উচ্চতার ক্ষেত্রে জেনেটিক্স হল প্রধান ফ্যাক্টর। এই তত্ত্বের সঙ্গে একমত পোষণ করে ব্যাঙ্গালোরের ফিটনেস কোচ সুনীল কুমার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করেছেন। তাঁর মতে, “গ্রোথ হরমোন অর্থাৎ আপনার শরীরের বৃদ্ধির জন্য দায়ী যে হরমোন, তার নিয়ন্ত্রণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
“পুষ্টি এবং কার্যকর ঘুমও খুব জরুরি,” বলেছেন ডাঃ সিদ্ধার্থ উন্নিথান, এর্নাকুলাম, কোচি, কেরালার একজন স্পোর্টস মেডিসিন ডাক্তার। তাঁর বক্তব্য, “শিশুদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো দরকার। বাচ্চাদের দিনে অন্তত আট থেকে দশ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে।”
ভিটামিন ডি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, তা হাড় মজবুত এবং বৃদ্ধি করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যায়াম কি সত্যিই আপনার উচ্চতায় প্রভাব ফেলে?
“বয়স এবং লিঙ্গ আপনার উচ্চতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,” বলেছেন চেন্নাইয়ের ক্রীড়া ও ব্যায়াম বিজ্ঞানী শিবানী রঞ্জিত। একজনের উচ্চতা বয়স এবং তাঁর বৃদ্ধির গতির উপরেও নির্ভর করে। মেয়েরা সাধারণত 14-15 বছর বয়স পর্যন্ত বাড়তে থাকে, ছেলেরা 16-18 বছর বয়স পর্যন্ত বাড়তে থাকে। রঞ্জিত ব্যাখ্যা করেন, “ব্যায়াম বা খেলাধুলার সময় নড়াচড়ার ফলে সৃষ্ট মেকানিক্যাল লোড প্রাথমিক কিশোর বয়সে হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।”
বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রাথমিক বয়ঃসন্ধিকালে একটি মূল নিয়ামক হল গ্রোথ হরমোন। সুনীল কুমারের কথায়, “9-11 বছর বয়সের মধ্যে শরীরে গ্রোথ হরমোনের উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছয় এবং তারপরে এটি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। তাই, এই বয়সে প্লাইমেট্রিক ব্যায়াম করা হাড়ের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্বকে প্রভাবিত করতে পারে।”
শরীরের দীর্ঘ হাড়ের প্রান্তের কাছে উপস্থিত তরুণাস্থি দিয়ে তৈরি গ্রোথ প্লেটগুলি উচ্চতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। ডাঃ উন্নিথান যোগ করেন, “একটি শিশুর মধ্যে বৃদ্ধির প্লেটগুলি বন্ধ হয় না। তাই, ফুটবল এবং বাস্কেটবলের মতো ব্যায়াম বা খেলাধুলা, যার মধ্যে দৌড়ানো এবং লাফ দেওয়া দুই-ই রয়েছে, তা উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তবে, একবার আপনি বয়ঃসন্ধি লাভ করলে, এই বৃদ্ধির প্লেটগুলি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, ব্যায়াম করলেও একজন ব্যক্তির উচ্চতার উপর ততটা প্রভাব ফেলে না।”
ব্যায়াম কি আপনার উচ্চতা বাড়াতে পারে, বিজ্ঞান কি বলছে?
অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, সাঁতার কাটা, পুল-আপ, হ্যাঙ্গিংয়ের মতো ব্যায়াম করলেই উচ্চতা বাড়তে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কোনও বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই। রঞ্জিতের কথায়, “সুইমিং, ক্লাইম্বিং এবং হ্যাঙ্গিংয়ের মতো ক্রিয়াকলাপগুলি খুব অল্প পরিমাণে উচ্চতা বাড়ায়, যা আপনাকে স্রেফ লম্বা হওয়া বোধ করাতে পারে। তবে তা অস্থায়ী। যে সামান্য পরিমাণ উচ্চতা বেড়েছে, তা কমেও যেতে পারে।” তাঁর বক্তব্য, “কিছু ঝোলার পরে আপনি যখন আবার দাঁড়াচ্ছেন, তখন মাধ্যাকর্ষণ প্রভাব মেরুদণ্ডকে স্বাভাবিক উচ্চতায় কিছুটা সংকুচিত করে।”
সুনীল কুমার বলছেন, “কৈশোর শেষ হতে না হতেই কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন, এমন অনেক লোকই প্রচুর পুল-আপ এবং প্লাইমেট্রিক ব্যায়াম করার পরেও লম্বা হতে পারেননি।” তবে উচ্চতা বাড়বে নাকি বাড়বে না এসব না ভেবে একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেকেরই প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করা উচিত বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মোদ্দাকথা
* জেনেটিক্স, পুষ্টি, ঘুম, হরমোন, বয়স এবং লিঙ্গের মতো একাধিক বিষয় ব্যক্তির উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করে।
* ব্যায়াম এবং খেলাধুলা কিশোর বয়সে উচ্চতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
* একবার বয়ঃসন্ধি অর্জিত হলে, ওয়ার্কআউটের পরে উচ্চতায় যে কোনও বৃদ্ধি অস্থায়ী।